Saturday, December 28, 2019

প্রেমানন্দ

********** প্রেমানন্দ 
--------- এম এ মাসুদ রানা 

হাসির মাঝে ভালবাসা খুজে পাই
পেয়ে সবকিছুই তো ভুলে যাই,
এই তো থামানোর যন্ত্র নাই। 
বেসুরা সুরে শুধু গায় আর গায়
এরই মাঝে ভালবাসার ঘ্রাণ পাই।

কত যে কথা, কত যে ভাষা
মনের মাঝে বাঁধে যে, বাসা,
স্বপ্নের তুলিতে স্বপ্ন সাঁজায়
তারই মাঝে প্রেমের নীড় বাঁধা
সবই প্রেমের সুরে প্রেমমাল গাথা।

কুয়াশা ঢাকা এই সকাল সাঁঝে
স্বপ্নের কথাগুলো হৃদয়ে বাজে,
স্বপ্ননে ঘুরে আসি স্বপ্নের দেশ
দূরে নিরালাতে বসবো বেশ
কথার মাঝে চলবো কথার পেচ
এই কথার হবে না শেষ।

কিনে দিবো তোরে পুঁতির মালা 
পড়িয়ে দিবো তোকে যতনে গলে,
পড়িয়ে নিবে তুই মান্দার ছলে
মোর বুকে প্রেম জ্বালা জ্বলে বলে
তাই তো প্রেমানন্দ নিয়েছি কোলে।


Thursday, December 26, 2019

বিফল বাসনা

 বিফল বাসনা 
এম এ মাসুদ রানা 

আমি পাইনি খুজে তোমায় কোন কূলে
হেমন্তের শিশির ভেজা ফুলে ফুলে।
তুমি এসেছিল না'কি সেই হৈমন্তী রথে
হাল্কা কুয়াশা মাখা ছিলে তো বটে। 

তুমি এসেছিলে না'কি যমুনার স্রোতের অনুকূলে?
উত্তাল-পাতাল ঢেউয়ে ফেপে ফুলে। 
এসেছিল না'কি কাগজের নৌকায় চড়ে?
তোমায় পাইনি খুজে যমুনার কোন চরে।

তুমি একেছিলাম না'কি অনুভবে অনুভূতি নিয়ে?
বেলা শেষে ফিরে যাবে ভালোবাসা দিয়ে,
অথবা রঙধনুর সাত রঙে নিবো চেয়ে
মনে যতটা আছে পাওয়ার যাবো পেয়ে।

হলো না চাওয়া, হলো না পাওয়া,
হবে কি করে আর নাওয়া, খাওয়া? 
ভাঙ্গা মন রাতে শুধু কাঁদে আর শুধু কাঁদে
কষ্ট ভরা প্রতি প্রহের ফাঁকে ফাঁকে। 
তুমি এসেছিল না'কি নয়নের জলে?
দিয়ে গেলে তুমি নিরাশাকে কোলে!


Tuesday, November 19, 2019

ভালবাসায় সাড়া দাও

 ভালবাসায় সাড়া দাও

  এম এ মাসুদ রানা 


আমি বলি অনন্ত বিরহ, কখনো দহন কাল
সবার জীবনে বুনতে চাই জাল!
আমার শূন্য দৃষ্টি এক সমুদ্র নোনা জলে ভাসে
এক রূপকথার গল্প বলে নীববে কাঁদে।

হে প্রিয়তমা!
তোমার মনোকাশটা আমায় দেবে শুনি?
দিলে কি ক্ষতি হবে এটাও একটু জানি?
না দিলেও ক্ষতি নেই আমার।
আমার এই জীবন শুধুই বিরান ভূমি
উপযাচক হয়ে করতে এসো না খুশি।
মুঠো ভরে একমুঠো দিয়ো গো আশ্বাস
তৃষ্ণাত্তুর হৃদয়ে সেটাই করবো বিশ্বাস।

সেই আশ্বাসে পাই যেন অতীতের ফেলে আশা বিশ্বাস
হলুদ পাতার সবুজ দৃষ্টিতে নিবো নিঃশ্বাস।
নতুন চরে উড়ে আসা সাদা বকের সারি
সাদা কাশফুল হাওয়াতে করবে নড়ানড়ি।

আমার একটা সমুদ্র চাই
যেখানে আশ্বাসের ভালবাসা নাই।
দু'এক ফোঁটা বৃষ্টিতে, একটা সমুদ্র ভিজে
সমুদ্রের সাথে পাল্লা দিয়ে কেউ কি জিতে?
সবাই ছুটে আসে, তার গায়ে কিছু জলে ভিজে নিতে।

আকাশ জুড়ে যখন কালো মেঘের ঘনঘটা করে
তার ভয়ে কি সমুদ্র কখনো কি নড়ে?
সময়ের বিবর্তনে অন্ধকারে ঢাকা শুকতারা,
আবার সূর্য ডোবার পর একই স্থানে ধ্রুবতারা,
কেউ উদয় হয় না, তাদের নিজেস্ব স্থান ছাড়া
তুমিও দাও, আমার ভালবাসায় সাড়া।

Tuesday, November 12, 2019

বিচিত্র মানুষ

               বিচিত্র মানুষ 

                 এম এ মাসুদ রানা 

````````````````````````````````````````````````````````
নৈঃশব্দ্য শব্দটি খুব শদা
মানুষ সংক্ষিপ্ত ধ্বনি চায় অর্থ খোঁজে খুব বেশি
অর্থে খোঁজ না পেলেও করে তারা চেচামেচি
বিভিন্ন কারণে চলে আসে কাছাকাছি
ছলনা ও ললসা পেতে কথা বলে মিছামিছি।

বড়ই বিচিত্র কামনা-বাসনা থাকে মানুষের
স্বভাবও দ্রুত জমা বদলায়। দুর্বৃত্ত বাতাসে
উড়ে যায় পূর্ণিমার অদৃশ্য গহীন শাদা জোৎন্সায়
বিষাদের গ্রীবার জ্বলে ওঠে শোকের স্তবক অখণ্ড বিষাদ।

রঙ্গিন মেঘের গাঢ় রঙিন রোদেলাবিকাল মৃত
রজনীর উঠোনে উজ্বল মেঘের শাদা ধ্বনি, গূঢ়
বেদনার নিঃশব্দ অশ্রু ঝরে অলক্ষে কোথাও
ঝরা অশ্রু হবে কি আবার বৃথা?

মানুষের পকেটে নেই নক্ষত্র, মেঘভর্তি ব্রিফকেস হাঁটে
সুন্দর আঙুলগুলো দিনরাত অন্ধকার লেখে
শর্টহ্যান্ডে লেখে অপ্রতিরোধ্য বিষাদ দীর্ঘশ্বাস
পায়না তো জীবনে বাঁচাবার উচ্ছাস।

তবুও আমাদের প্রতিটি সকাল  অপেক্ষায় থাকে
মানুষের জন্যে সুখের পাখির জন্যে
সুখ পাখি পেয়ে হবে তো সবাই ধন্য
সুখ পাখি করবে কি আমাদের গণ্য?
বাজারে হবে আবার সবে কি কেনা বেচার পণ্য?
আমাদের বাঁচার জন্য পায়না অন্য।

অমর একুশ

             অমর একুশ 

               এম এ মাসুদ রানা 

বিষাদের করুণ ধুলোর নেইতো আর শেষ!
কষ্টদল আকাশে উড়াল দিয়েছে হাওয়া হাওয়া,
বায়ু প্রবাহের প্রত্যাশায়, বাঁধন ছেঁড়া বল্গাহরিণ হাওয়ায়,
দেয় ছুট জন্মে-জন্মে চেনা সবুজ জমিনে!

শোক নই তাই!  মুঠোভর্তি গাঁদাফুল নিয়েছি হাতে
হয়েছে কৃষ্ণচূড়া লাল, প্রদীপ্ত যৌবনের -ঘ্রাণ!
শোকের প্রভাতী মিছিলের নগ্নপদধ্বনি বেজে ওঠে আজ
নবতর দৃপ্ত মূর্ছনায়! উছলে উথলে ওঠে আলোর বকুল!

কে তারে বাঁধতে পারে ফের শৃঙ্খল-পিঞ্জিরায়
শহীদের স্মৃতিতে ছুটেছে দিকবিদিক,  বিশ্বময় ব্যাপ্ত আজ
একুশের অমেয় সঙ্গীত, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো.....
বিশ্বের পতাকা জুড়ে পৎপৎ ওড়ে শহীদের স্মৃতি বিশ্বময়!

উঠুক জেগে ফুলের সৌরভে ফসলের ঘ্রাণ!
মুখেমুখে নাচুক আলোর মুগ্ধ ব্যাকুলতা!
দূর হোক ক্ষুধা-ক্লান্তি-জ্বরা অন্তহীনতা!
বাংলাদেশ হাসুক খিলখিলি প্রাণবন্ত হাসি অমলিন
তাই চাই খোদা!
এইটুকু চাই!
শান্তি হোক শহীদের রক্তাক্ত আত্মার।

আমি ফিরছি

        আমি ফিরছি 

          এম এ মাসুদ রানা 


অন্ধকার ধূলিপথের বাঁকে বাঁকে ঘুরে ঘুরে
বেদনা বিধ্বস্ত একা একা ফিরছি......
তুমি কী জেগে আছো আমার অপেক্ষায়?
আমি রাত জেগে সবকিছু আগের মত সাজায়।

ঐ যে স্বপ্ন ঘুড়ির স্বপ্ন আঁকা দিন
ঐ যে রূপালি নদীর স্রোত, শৈশবের দুরন্ত সাঁতার
মনে পড়ে না  কী তোমার?
দীর্ঘ জলের দুর্দান্ত গল্প, মনে কী আছে তোমার?
ফিরছি, আমি আর থাকবো না একা একা,
ফিরছি, আমি তোমার কাছে ফিরছি!

অন্ধকার ধূলিপথের শহর নগর
লাবণ্যের সবুজ গল্পরা হারিয়ে গেছে
প্রযুক্তির লাল সন্ত্রাসের থাবায়!
বেঁচে আছি শুরু আমি তোমার আশায়।

ঐ যে রঙ বেরঙ্গের পাখি ডাকা সকাল
ঐ যে প্রাক বিদ্যালয়ের  বৃক্ষ বন্ধুরাজি
ডাকছে, ডাকছে, খুবই বেশি ডাকছে আমায়
কল্পের কল্পনাতে মনে পড়ছে তোমায়

তুমি কী জেগে আছো আমার অপেক্ষায়?
আমি, একা একা বেদনা বিধ্বস্ত ফিরছি!
আমি ফিরছি, আমি ফিরছি বুকভরা আশা নিয়ে
তুমি নিয়ো গো, নিয়ো আমায় মানিয়ে।

Friday, November 8, 2019

বিরহের সুর

        বিরহের সুর 

        এম এ মাসুদ রানা 


হাত বাড়িয়ে রাখি অন্ধকার রাতে
ঘোমটা দিয়ে ডাকা তোমার মুখ,
নিজেকে লুকিয়ে রেখে পা-ও কী সুখ?
ভুলেও যদি পড়ে মোর কথা মনে ;
খুজবে আমায় অন্ধকার ঘরের কনে।
বিরহের সুরে গাইবে স্বপ্নের গান
গানের মাঝে খুঁজে পাবে ভালবাসার মান।

বাস্তবে আবেগ নিয়ে ভুলতে চাই তোমাকে
জোনাকির মতো তারা নেভে আর জ্বলে
পাই না খুঁজে আমি তোমার সুঘ্রাণের সুর।
এই রিক্ত হাত দূ"টি হৃদয়ের কোলে
পাবো না"কি তোমায় কোন কৌশলে?
শূন্যতার হাহাকার নিয়ও তুমি আমলে।

তারার শত প্রদীপ জ্বলে আকাশের গায়
সেই পানে চেয়ে জল ঝরে হয়েছি যায় ম্লান।
মনে হয় আসবে ফিরে নুপূর পরা দু'পায়ে
অপেক্ষায় বাড়িয়ে রাখিবো রিক্ত  হাত।
প্রেম নাই, সুখ নাই গেছো তুমি উড়ে,
 খুঁজি আর খুঁজি তোমায়, বিরহের সুরে।

Wednesday, November 6, 2019

অভিমানী কন্যা

      অভিমানী কন্যা 

         এম এ মাসুদ রানা 

````````````````````````````````````````````
অভিমানী কন্যা ফিরে এসো
হাত বাড়িয়ে দিই রজনী গন্ধার ঘ্রানে,
বাড়িয়ে দিই লাভ লেইনের সন্ধ্যা
টাঙ্গন নদী, সিরাজউদৌলা রোড়
আর কাঠালডাঙ্গী হাটের দুপুর।

এতো অভিমান করতে হয় না পাগলী
এসো মাশানগাঁও সীমান্ত বোর্ডারে
ঝালমুড়ি আরা বারোভাজা খাই।
জমিদার বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে কিনে দিই
বকুল ফুলের মালা।

এইসব কিছুই নেবে না তুমি?
তবে চলো লাইব্রেরিতে-এ যাই।
কিনে দিই জুলফিকার আলি বই
কেটে যাবে তোমার অভিমানের ক্ষণ।


বিনাশ বাঁশির সুর

           বিনাশ বাঁশির সুর  

                 এম এ মাসুদ রানা 

""""''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''"""""''''''''''''''''''''''''''''''''""""""""""''"""""""""""""
আমি শীতের প্রারম্ভিক লগ্নে,
শীতে শিরশির কুঁকড়ে উঠে স্বপ্ন দেখছি,
তুমি শীতের রাতে কমল ও পশমি বস্ত্রে
ঘুমের ঘরে গড়াগড়ি খেতে খেতে স্বপ্ন দেখছো।

আমি জেল গারদের ভিতরে শুয়ে শুয়ে
বদনে অন্তঃসলিল নদীর সমূহ যন্ত্রণা নিয়ে
ঘুমের ঘরে স্বপ্নে তোমার শরীরে প্রবাহিত হই
মিষ্টি লোভে শীতের পিপীলিকার মত করি ভীড়।

তুমি নিশ্চিত শয্যায় অলস পরশ নিয়ে
ঘুমের ঘরে স্বপ্নে ফুলের দেশে, পরীর সখি।
কোন অচেনা রাজপুত্তুরের ঘোড়ায় চড়ে
পরম প্রেম মাখা মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছ।
সেই  ঘোড়ার চলার ধ্বনি শুনে
জেলের চার দোয়ালের ভিতর গুমড়ে ওঠি
ক্রমশ ঘনিয়ে আসা স্বপ্ন বিনাশ বাঁশির সুর।

Monday, November 4, 2019

তুমিও কাঁদবে একদিন

তুমিও কাঁদবে একদিন

   এম এ মাসুদ রানা 


তুমিও একদিন অঝরে কাঁদবে
আমার মত শূন্য বুকে নিয়ে,
নয়নের ঝরা জল শুকাবে না
আসবে না কেউ মুছে দিতে।

অন্ধকার গলির মাঝে একলা
চারপাশ ভরে থাকবে কাল ছায়া
ডাকবে না তোমায় আলোর পথে
পথের খোঁজে মন হবে দিশেহারা।

আমার মত করে অপবাদে
মিথ্যে অপরাধে অপরাধী হয়ে
বোবা ব্যাথায় কাঁদবে তখন
স্মরনে পড়বে আমায় বারে বার
তখনি খোঁজার চেষ্টা করবে বুহুবার
এই আপরাধে থেকে পাবে না পার।

আমি হারিয়ে গেছি হারানোর পথে
দূর এক অচেনা গগনের মাঝে
কতশত জীবন নদীর কূল ঘেসে।
ফুটবে না নতুন বসন্ত প্রভাত
তোমার মরে যাওয়া হৃদয় পানে।

Sunday, November 3, 2019

মন

            মন

‌‌‌‌    এম এ মাসুদ রানা 

""""""""""""''''''''""'''''"'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
চোখে থাকা রঙিন স্বপন
আমি ভাসিয়েছি কবেই,
চোখের ঝরানো জলে,
তাই বেদনা নিয়েছে কোলে।
মন তবুও আশায় থাকে
স্বপ্নগুলো কোন দিন
আসবে ফিরে পাবে বলে
সব যাতনা যাবো ভুলে।
যতই বলি এই মনকে
স্বপ্ন খুজে পাবে না।
এই মনে আছে স্বপ্নের আসন
মানে না আর কোন শাসন।
আশাও আর ছাড়ে না,
স্বপ্নও তো আর ফিরে আসে না।
পথগুলো আর হারিয়ে যায় না
মন ধরে কথায় কথায় বাহানা।

Thursday, October 31, 2019

ক্ষমা চাই

                       ক্ষমা চাই

                       এম এ মাসুদ রানা 

“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””"""""""""''''''''''""""''''''""""""""""""
মনের অজান্তে কাউকে আঘাত দিয়ে থাকলে ক্ষমা চাই,
হতে পারে এমন দুর্ঘটনা আচার-আচরণ বা কথাই।
আমি মানুষ আমারও ভুল আছে, কেউ ভুলের উর্ধে নয়,
জ্ঞানীগুণী, মহামানব, পীর-দরবেশ ভুল করে নিশ্চয়ই ।

আমি তো কে এক তুচ্ছ মানুষ আমার জ্ঞানই কতটুকু,
নগন্য জ্ঞানের অধিকারী মানুষ সরিষা পরিমান যতটুকু।
মানুষ গর্বে ফেটে পড়ে, দেখায় কি দাপট, কি অহংকার?
ভুলে থাকে সৃষ্টি, ভুলে থাকে প্রভুকে, ভুলে থাকে শেষ বিচার।

ক্ষমা করে দাও হে স্বজন বন্ধু সখি নিরন্তর কাঁদে এ আঁখি,
করেছি কোন দোষে, মরছি পিষে নিদারুন ব্যথা ওঠে বুকে?
এই ব্যথার কারণে আজ আমি বেঁচে আছি ধুঁকেধুঁকে।
একদিন চলে যাবো, যে যার মতো সকল বন্ধন ছিঁড়ে,
তাকাতে পারবে না কেউ আর পিছু ফিরে-ফিরে,
স্বজন বন্ধু সখি সকলে রবে আপন-আপন নীড়ে।

হবে না দেখা খোলা-মেলা সেই দিন মরনের পরপারে,
কিঞ্চিৎ ব্যাথা যদি দিয়ে থাকি ধরণীর বুকে কোনো ছলে,
বুকে জমা রেখ না তুমি মন থেকে ক্ষমা করে দিও স্বজন বলে।
শুধরে নাও, ক্ষমা দাও, নয়লে মুক্তি পাব না কোন কালে।

Sunday, October 27, 2019

তমি আর ফিরবে না

তুমি আর ফিরবে না

    এম এ মাসুদ রানা 


আমি জানি!
তুমি কখনো ফিরবে না
আমার এই স্বপ্ন সাঁজানো নীড়ে
থাকবে তুমি শত মানুষের ভীড়ে।
ধরবে না আমার দুটি হাত
তবু চাই, সুখি হও, তুমি সুখী হও,
তোমার মনের মতো নীড়ে।

আমি জানি!
প্রতিক্ষার প্রহর শেষে হবার নয়
ফুটবে না ঊষার আলো পূর্ব গগণে
তবু আছি তোমার অপেক্ষায় বিহনে।
আসবে না সূর্য প্রভাত আমার লগ্নে
তোমাকে দেখি যে আমি শয়নে-স্বপনে।

Sunday, October 20, 2019

এসো দ্বীনের পথে

এসো দ্বীনের পথে 

       এম এ মাসুদ রানা 


ধর্ম ছেড়ে গোমূত্র খোঁড় হয়ো না,
পাইবা না ভাই কোন ছাড়,
সুযোগ বুঝে তারাই ধরে মারবে আছার।
মোরা নয় কারো হাতের গড়া পুতুল
ইচ্ছা মতো করবে তোরা অদলবদল
জীবনটা তোকে যে, করেছে দান
দানের ফলে রেখেছো কি তার মান?

জালিমেরে ভয় করছিস তোরা
বলো তোরা এটাই হলো বাঁচা মরা।
মরণ থেকে বাঁচতে পারবে নাতো ভাই
সত্য হলো বলি তাই,
ইলাহি ছাড়া বাঁচার কোন রাস্তা নাই
যদি বলো আছে, সবে পুরে হয়েছে ছাই
ঐ পথে বাঁচার কোন উপায় নাই।

অতীত যতো ঘটেছে, সবে ভুলে চলো
শুদ্ধি লাভের তরে খোদা সাথে বলো।
তারেই ফলে খোদা, তার বাড়াবে হাত,
সেই কারনে তরে পেয়ে যাবি নাজাত।
তাঁর কাছে চাও তুমি পরিত্রান।
বর্ষণ করো করুন সুরে মাগফিরাতে
তহলেই তো খোদা থাকবে তোমার সাথে।

তোরা চুপ থাক

তোরা চুপ থাক

 এম এ মাসুদ রানা 


তোদেরকে বলছি,
আমি তোদেরকেই বলছি!
তোরা কিছুই দেখো নাই,
তোরা কিছুই শুনো নাই,
তোরা কিছুই জানো নাই।

তোরা করছো কেন বাহাদুরি?
তোরা করছো কেন বাড়াবাড়ি?
তোরা করছো কেন মাতামাতি?
তোরা করছো কেন কাড়াকাড়ি?
তোরা করছো কেন নাচানাচি?

তোদের ভাবনাতে কি আসে যায়?
তোদের  মরনের কি ভয় নাই?
তোদের বাঁচবার কি স্বাদ নাই?
তোদের জীবনের কি মায়া নাই?

দেশ চলবে মোদের কথায় তোদের কি আসে য়ায়?
তোরা পড়তে গেছো, পড়তে থাকো এটাই তোদের কাজ।
দেশের ভাবনা, ভাবার মতো তোমাদের দরকার নাই।
দেশের ভাবনা, ভাবতে ভাবতে এসেছো মৃত্যু কাছাকাছি
মৃত্যুকে ভয় না করে, দেশের জন্য ধরেছো জীবনবাজি,
জীবন নিয়ে করছো কেন এতো মাতামাতি?

দেশকে নিয়ে ভাবো যে, তোরা
ভাবনা ভেবে পাবে কি এমন ফল?
দেশের জন্য পরছে কেন তোদের চোখে জল?
অকাল মৃত্যুই হবে, তোদের কর্মের ফল।
শাসক সমাজ আজ মানে নাতো কোন দাবি
তোদের লাশ দেখে ওরা করতেছে হাসাহাসি
তোদের লাশ দেখে বলো, আমরা কেমন করে বাঁচি
এর চেয়ে এই ভালো আমরা সবাই চুপ হয়ে থাকি।

Friday, October 18, 2019

তুমি কি আমার হবে না

তুমি কি আমার হবে না

   এম এ মাসুদ রানা 

__________________

ছলছল জল ভরা দু'নয়ন,
নিঃচুপ বলহীন এই বদন,
কতদিন দেখি নাই তোমায়,
আমি ভাল নেই, ভাল নেই
ভালো আছো কি তুমি?

একাকী নিরব রাতের যাত্রী হয়ে
কাটতেছি দিবস আর রজনী
আমায় নিয়ে কিছুই ভাবনি কি সজনী?
ঘন কালো মেঘ, অন্ধকার রাত
নিভে যাবে রাতের সব তারা
আধারে ঢেকে যাবে চাদের জোস্না
কাটবে কি ভালভাবে সময় আমার?

তোমার ভাবনায় পরে আছি আর্হনিশ
একাকী মন ভরে থাকে শুধু বেদনায়
এই মনে তুমি আসবে কখন?
তুমি আবার আমায় ভালবাসবে কখন?
গহীনে রেখছি প্রেম অতি গোপনে
দেখছি তোমায় আমি শয়নে স্বপ্নে।
বিরহ ব্যাথা জাগে শূন্যতায় হাহাকার
ব্যথাতুর হৃদয় নিয়ে হয়েছি একাকার।
নেই তুমি, তবু আছে মনের মাঝে
বেখালে তবুও হৃদয় আছো তুমি
রঙ তুলিতে আঁকেছি তোমার ছবি।

Sunday, October 13, 2019

রঙ্গিন আয়না

  রঙ্গিন আয়না 

 এম এ মাসুদ রানা

আমি তোমাকে ভালবেসে
এতটাই অন্ধ ছিলাম যে,
ভালো মন্দের করিনি বিচার।
তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করবে
এমনটা করবে কখনো ভাবিনি
আমি হব মিথ্যে প্রেমের শিকার।

ধন্য তুমি, ধন্য তুমি, তোমাকে ধন্যবাদ
বিশ্বাস করা কোন নয় অপরাধ,
বিশ্বাস করে পেলাম আঘাত অপবাদ
মিটে গেছে আমার ভালোবাসার স্বাদ।

ভুল করেছি, ভুল বুঝেছি
ভুলের মাশুল দিচ্ছি আজি।
তাই তো এসেছি তার কাছাকাছি
দু'চোখে অশ্রু নিয়ে বেঁচে আছি মিছামিছি।

প্রেষ্য

         প্রেষ্য 

   এম এ মাসুদ রানা 


সন্ধ্যা থেকে ভোর করি
আলাপচারিতায় মেসেঞ্জারে।
হৃদয় থেকে বলি কথাগুলো
মূল্য ছাড়ই চলে বেচাকেনা
রঙ্গিন কথাই কথাই হয় চেনা
শুরু হয়ে যায় মন লেনাদেনা।

আগের মত নাইরে কেউ
নানান কাজে ব্যস্ত বিষণ।
আমি ছাড়াও আছে যে তার
নতুন কোন সুখের ভিষণ
সর্বক্ষণে ছিন্ন মুখী ভিন্ন মিশন।

যার জন্য লাইলী সাজো
কখনো দেখেছো ভেবে,
সে কি তোমার মজনু হবে?
বাড়তি কিছু করো যে তুমি
এটা তো তোমার প্রেম নয়
কাছে আসার প্রয়াস কয়
কত যে কথা মিছেমিছি হয়।

Friday, October 11, 2019

ইনসাফ

       ইনসাফ 

    এম এ মাসুদ রানা


মাগো তুমি বিচার করো,
এই খুনিদের বিচার করো,
বিচার করো মা তাড়াতাড়ি।
দেখ না মা চক্ষু মেলে
কে হলো সে, কোথায় বাড়ি।

ন্যায় কানুনে বিচার করো
মনটা তোমার মা শক্ত করো
তোমার বিচার দেখুক বিশ্ববাসী
বাংলার বুকে হয় যেন তাদের ফাঁসি
সুবিচার হলে ঝরবে দেশে চাঁদের হাসি।

মাগো তুমি রাখবে কথা
বুঝিয়ে দিবে তোমার মর্মব্যথা।
দেশবাসীর মিটাও জ্বালা
ঐ খুনিদের বিচার করো।

Thursday, October 10, 2019

আবরার

          আবরার

        এম এ মাসুদ রানা  


এইতো সেদিন বুয়েটের ক্যাম্পাসে গেয়েছিলে গান
গানের মাঝে পাওয়া গেল দেশাত্মবোধের টান।
এর ফলে, হৃদয় বিদারক ঘটেছিল বুয়েটে গতকাল।
তাই হায়েনার নিয়ে নিল আবরার তোমার প্রাণ।
নিদ্রাহীন উত্তাল-উত্তাপ অবস্থায় ছাত্রসমাজ
পতিবাদ করছে করবে ওরা, ছাড়েনি পথঘাট।

নিঃচুপ হয়ে আছে বুয়েট প্রশাসন
প্রতিবাদী সহপাঠীদের করছে প্রহসন।
ভাবছাড়া কথাগুলো বড্ড বেসামাল
অপরাধীদে অপরাধ দিচ্ছে সামাল
এই নিয়ে পরে গেছে বাংলায় তুলকালাম।

অপরাধীদের আজ ফুরফুরে মেজাজ,
অপরাধ করাটাই হলো তাদের মুল কাজ,
অপরাধ করলে তো তারা পেয়ে যায় আজাদ।
অপরাধ করতে না করে কোন হিসাব
আদালতের বিচারে নেই কোন ইনসাফ।

তোমাদের বলি, তোমরা তো কোন মায়ের সন্তান,
রাখলে কি তোরা তোদের মায়ের সম্মান?
কথায় কথায় নিচ্ছো তাজা প্রাণ।
এই সমাজটাকে করচ্ছো যখন তখন খানখান
তোমাদের কাজ করবে না'কি অবসান?
এই বাংলা ফিরে পাক তার নিজ প্রাণ।

Monday, October 7, 2019

অবুঝ মন

       অবুঝ মন 

   এম এ  মাসুদ রানা 


মনের অজান্তে মন যদি
তোমাকে ভালোবাসে ফেলে,
ক্ষমা করে দিও তুমি আমাকে
বৃষ্টি ঝড়া দু'চোখে শূন্যতা শুধু থাকে
মরা পাতা যাক না ঝড়ে বৃষ্টির জলে।

বেদনা থেকে যাক, আমারে মনে
সুখে থেকো তুমি, যদিও কারো সনে।
থাকো সুখে ভাস সুখে, সুখের সাগরে
তীরে রইব দাঁড়িয়ে, তোমার আসার তরে।
আমি না হয়,  অতি নগণ্য  একজন
অনন্তর পথে অপেক্ষায় রেখ না সারাক্ষণ।

থাকবো চেয়ে, তোমার আপেক্ষাতে
আমার পৃথিবীটা, তুমি বিনা একাকারা
দিয়েছি ওগো তোমার করে, এই ভূবন
তোমার কাছে, চাই না কোন মূল্য,
তবু হবে না'কি ভালবাসার সমতুল্য?

অন্যের নীলাকাশের বুকে, রংধনু সাজাতে,
আমি এসেছি অযাচিত প্রথিক হয়ে।
জীবনে দেখা না দিলেও, দেখা দিও মরনের।
চাইবো না জোর করে পেতে তোমার ভালবাসা
তোমার ভালবাসা চাওয়াটাই যে, মিছে আশা
নিঃস্বার্থ হয় না তো কখনো কোন ভালবাসা।

Thursday, October 3, 2019

নফস

         নফস 

এম এ মাসুদ রানা 


নফস যখন হয় আত্মহারা
মানে হয়ে যায় স্বেচ্ছাচারী!
কর্মটা হয়  যায় ভীষণ খারাপ
সমাজ হয়ে যায়  অস্ত্রধারী!
দেশে চলে ঘুষের কারবারি
দফায় দফায় চলে শুধু মারামারি।

নফস যখন হয় লাগাম ছাড়া
মানে ভুলে জ্বলছে তারা।
কর্মের ফল হয় তখনি দিশেহারা
অর্থের নিয়ে ভেবে মরছে ওরা।
ফুসরতে থাকলে দেয় যে সাড়া
ব্যস্ত হলে কোন কাজে দয় না নাড়া।

নফস থাকে লুকিয়ে তাদের
সঠিক ফল কি দেবে মোদের?
তাদের কাজে জয়ী হলে
প্রশান্তি আর তৃপ্তি তার ফলে।
প্রভুর প্রতি কোন নয় ভয়,
কথায় কথায় ওয়াদা কয়।
মনে আসে না মৃত্যুর ভয়,
করছে না তার নফস জয়।

Sunday, September 29, 2019

ভালবাসার বন্ধন

 ভালবাসার বন্ধন 

 এম এ মাসুদ  রানা 

___________________________________
কোথাও কেউ নেই, একা বসে আছে
নির্জন দ্বীপের মাঝে, সমুদ্রের কাছাকাছি।
হঠাৎ তোমায় দেখে, মনে জাগে শিহরণ
একপলকের দেখায়, ভালো লেগে যায়,
ভালো লাগা থেকে হয়ে যায় ভালোবাসা
হয়ে গেলো তোমায় নিয়ে, আমার স্বপ্নবাঁধা।
তাইতো, আবদ্ধ হলাম ভালোবাসার বন্ধনে।

তোমার আদর আমার প্রতি আছে যে, শুভক্ষন
ভালোবাসে দিয়ও তোমার মন,
এইতো চলছে জীবন, বাঁধিতেছি ভালবাসার বন্ধন
তোমার আর আমার মাঝে থাকবে না কানন্দ।

ভালো লাগে খুব ভালো লাগে, তোমার হাসি,
ভালো লাগে খুব ভালো লাগে, তোমার খুনসুটি,
ভালো লাগে খুব ভালো লাগে, তোমার রাগারাগি
ভালো লাগে খুব ভালো লাগে, তোমার বকাবকি।

এইতো জীবন সংসার তাই বলে কি?
ভালোবাসার বন্ধন শেষ হয়ে যায় কি?

যাবে নাতো, ভেঙ্গে আমাদের এই বন্ধন
আমাদের বন্ধন ভেঙ্গে যাবার নেই তো কারণ
আমি আজি বলি তোরে, মানি না কোন বারন
আমাদের ভালোবাসার বন্ধনে হয় যেন মরন।

তুমি বিহীন আমি বড়ই একা,
দু'জন মিলে চলতে চলতে হবে সব কথা।

Saturday, September 28, 2019

আমার দেশ

   আমার দেশ 

 এম এ মাসুদ রানা 


দেশটা আমার ভরে গেছে
মালাউনদের দালালে।
মালাউনরা শুধু স্বার্থ খোঁজে
সবধরনের ছলনা বুঝে।

আজ মন্ত্রী নেতা সাফাই গাই
মালাউনরা যা চাই তাই পাই।
মন্ত্রী নেতাকে করেছে বস
তাইতো মালাউনরা করে টসটস।

প্রতিবাদী হলে মোরা
ধরে ধরে মারিস তোরা।
প্রতিবাদ করেছে যারা
তাদের সাথে খেলেছে তারা
প্রতিবাদ কারে পাইনি খাঁড়া।
নিরাশ হয়ে থাকেনি তারা
সর্বক্ষণে প্রতিবাদ করেছে ওরা।

এজেন্টদেরকে বলছি মোরা
ভারত চলে যাও রে তোরা।
তোদের জন্য আছে গাভী ছাড়া
মুত্র না খেলে তরা যাবি মারা।
মুত্রর জন্য করিসনে মারামারি
ভাগ পারি তোরা হারাহারি।

Wednesday, September 25, 2019

তোমাকে পাওয়া হলো না




                                  

                   তোমাক পাওয়া হলো না

                                এম এ মাসুদ রানা

এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে বেকার বসে আছি রেজাল্ট এর আশায়।
আর বেকার থাকবো কেন?
উপার্জনের জন্য ছোট বেলা থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ ও খেলাধুলা করি নিয়মিত। বাবা মায়ের বড় ছেলে আমি। মাঠে একদিন কাজ না করলে কপালে ভাত জুটে না। তাই বড় হওয়ার সাথে সাথে হাত খরচও বাড়তে থাকে এই জন্য কাজের চাপও বাড়তে থাকে। নিয়মিত কাজ করার চেষ্টা আছে কিন্তু নিয়মিতকাজ পাবো কোথায়, তাই কোন দিন বেকার বসে থাকতে হতো। একদিন পাশের বাড়ির ভাবি আমাদের বাড়িতে এসেছে মায়ের সাথে গল্প করতে। আমার বাজারে যাওয়া খুব দরকার। বাজারে আমার কয়েকজন বন্ধু বসে আছে। আমার কাছে সে দিন টাকা ছিল না। আমার বাড়ি থেকে বাজার মুটামুটি অনেক দুর। বিশ টাকা লাগে রিক্সা বাড়া। হেঁটে যেতে প্রায় ২০/২৫ মিনিট লাগে। আমার জন্য তো ওরা এসে বসে আছে। যদি হেটে যাই তাহলে অনেক দেরি হবে ওরা রেগে যাবে। রিক্সা দিয়ে যাব হাতে টাকা নেই। ভাবির সামনে মায়ের কাছে চাইতেও লজ্জা লাগছে। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। লজ্জা দুর করে মাকে গিয়ে বললাম- মা আমাকে ১০০(একশ)টাকা দাও।
টাকা দিয়ে কি করবি?
আমি বাজারে যাব, বন্ধুদের সাথে দেখা করতে।
দাঁড়া দিচ্ছি।
তবে দেরি করিস না, তাড়াতড়ি চলে আসবি। তাই বলে মা টাকা বের করে দিল। ভাবি আমার কথা শুনে বলে ওঠল,কি গো এত বড় হইছো এখনো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যেতে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতে হয়?
কি করব ভাবি কোন কাজ তো পারি না, কোন ছেলে মেয়ে ও পাই না যে প্রাইভেট পড়াবো। বেকার ছেলেকে কে টাকা দিবে বলেন।
তুমি কি সত্যিই প্রাইভেট পড়াবে।
হুম, তবে ছাত্র/ছাত্রী পাব কোথায়।
তুমি তাহলে সনজিদাকে পড়াও। তোমাকে প্রতিমাসে ৩,০০০ টাকা দেব।
আমি টাকা এর লোভ সামলাতে না পেরে বললাম ওকে ঠিক আছে কাল থেকে পাঠায়েন। আমি এখন যাই।দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার বলে রওনা দিয়ে দিলাম বাজারে। বাজার থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়ে যায়। তাই রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যাই। সকালে ঘুম ভাঙ্গল মায়ের ডাক শুনে। ঘুম থেকে ওঠে দরজা খুলে দেখি সানজিদা দরজার সামনে দাড়ানো।
তুমি রুম এ গিয়ে বস, আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
ওকে ঠিক আছে।
সানজিদা সম্পর্কে আমার ভাতিজি লাগে। বাংলা মিডিয়াম স্কুলের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী। দেখতে খুব সুন্দরী। মায়াবী চেহেরার মিষ্টি একটা মেয়ে। আমাকে অবশ্য মামা বলে ডাকে। আমি নাকি দেখতে তার মামার মতো।মেয়েটি খুব পাকনা পাকনা কথা বলে। মাঝে মাঝে আমিও পেরে ওঠি না তার সাথে কথা বলে। তাই ভয় হচ্ছে আমি কি পারব তাকে পড়াতে। ভাবতে ফ্রেস হয়ে আসলাম রুমে। এসে দেখি সানজিদা পড়ার টেবিল রেখে আমার খাটে বসে আছে। আমাকে দেখে বলে ওঠল আমি কিন্তু তোমাকে স্যার বলতে পারব না। আমি তোমাকে মামা বলেই ডাকব।
আর হ্যাঁ আমার টেবিলে বসে পড়তে ভালো লাগে না তাই তোমার খাটে বসে পড়ব।
ওকে বাবা! ঠিক আছে। এবার বই বের করো। মেয়েটি একটু দুষ্ট প্রকৃতির। তাই একটু বেশি দুষ্টামি করে। তবে লেখাপড়ায় খুব ভালো। একটু বলতেই বুঝে যায়। সনজিদাকে পড়াতে পড়াতে আর ওর পাকনা পাকনা কথা শুনে ওর প্রতি আরো মায়া বেড়ে যায় আমার। সানজিদার সাথে গল্প না করলে ভালো লাগে না আমার।প্রত্যেকদিন বিকেল বেলা সানজিদা  স্কুল থেকে এসে আমার সাথে গল্প করতে চলে আসত। দুজনে বসে গল্প করতাম। মেয়েটি মোবাইলে গেমস খেলতে পছন্দ করত অনেক। আর গেমস খেলতে প্রায়ই আমার মোবাইল নিয়ে যেত। আমি ওর গেমস খেলা দেখে অবাগ হয়ে যেতাম। এতটুকু ছোট্ট মেয়ে কেমন করে গেমস খেলে।আর পারবেই না কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশের মেয়ে সানজিদা। এইটুকু ট্যালেন্ট না হলে কি চলে। আমি ললিতার কাছ থেকে clash of clan গেমস খেলা শিখি। এভাবে প্রায় তিন মাস কেটে গেল। আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলাম। সামনের মাসে আমার ক্লাস শরু হবে। তাই ভাবিকে বললাম ভাবি আমার তো ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। আপনে ১ তারিখ থেকে সানজিদাকে অন্যকারো কাছে পড়তে পাঠাইয়েন। সামনে ওর বার্ষিক পরীক্ষা। তাই এখন আর পড়ায় গেভ দিয়েন না। আমি পরের মাসে ঢাকা চলে আসি। আমার ভার্সিটি বন্ধ থাকে যখন বাড়িতে গেলে সানজিদার  বই আর খাতা কলম নিয়ে দৌড়ে আসে, মামা আমাকে এই অংকটা করে দাও, এই প্রশ্নটা একটু বুঝিয়ে দাও। আমি যতটুকু পারি বুঝিয়ে দেই। আর আমি যত দিন বাড়ি থাকি আমার পিছ ছাড়ে না। একটু পর পর এসে একটু গল্প করে আর মোবাইল নিয়ে গেমস খেলে। মেয়েটি ভালো রেজাল্ট করে ৫ম শ্রেনীতে ওঠেছে। আমাকে অনেকবার বলেছে মামা তুমি বাড়িতে আস। তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না। কিন্তু ক্লাস থাকায় আমার বাড়িতে আসা হয়ে ওঠেনি। রমজানের কয়েকদিন আগে বাড়িতে আসি আমি। রমজান পুরোটাই বাড়িতে কাটাই। এদিকে রমজানের ছুটি পেয়ে সানজিদা ওর নানার বাড়ি চলে গেছে। আমার একা একা ভালো লাগে না। সানজিদার ছেলে মানসিকতা দেখে আর গেমস খেলা দেখে আমিও ওর মত হয়ে গেছি। তাই এখন বসে বসে গেমস খেলি। হঠাৎ আমি ঈদের পর অসুস্থ হয়ে পড়ি।আমাকে হাসপাতাল এ ভর্তি করা হয়। একটা অস্রপ্রাচার করা হয় মাথায়। সবে মাত্র দুইদিন হল হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসছি। এর মাঝেই সানজিদার ফোন। মামা কেমন আছো তুমি। কই আছো তুমি। তোমাকে আমার নানার বাড়ি আসতে হবে।
কেন মা মনি?
আমি তো অসুস্থ।
এখন তো আমি আসতে পারব না।
আগামী পরশু আমার জন্মদিন। আমি এত কিছু বুঝি না। তোমাকে ছাড়া আমি কেক কাটব না।
এত করে বুঝালাম পাগলীটাকে বুঝলই না।
তোমাকে ছাড়া আমি কেক কাটব না।
এত করে বুঝালাম পাগলীটাকে বুঝলই না। বাধ্য হয়ে আসতে হলো আমায়। গেমস খেলার জন্য একটা এনড্রোয়েট মোবাইল কিনে নিয়ে জন্মদিনে আসলাম। আমাকে দেখে খুশিতে আত্মহারা সানজিদা। আরো ফোন পেয়েতো সব যেন ভুলে গেছে মেয়েটা। সন্ধ্যার পর কেক কাটা হলো। কেক কেটে সবাইকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে বিদায় করে দেওয়া হলো। আমি অসুস্থ থাকার কারণে খেয়ে চুপ করে শুয়ে ছিলাম। সানজিদার নানার বাড়ি থেকে আমার বাড়ি মোটামুটি ৩০ কি.মি দুরে। তাই আমাকে রাত করে আসতে দেয়নি। রাতে ললিতা আমার কাছে আসে মোবাইল সফটওয়্যার নিতে। আমি অসুস্থ দেখে কিছু না বলে আমার মোবাইল নিয়ে ওই নিজেই সফটওয়্যার নেয়। কি খুজতে যেন গ্যালারিতে যায়। গ্যালারিতে একটা ছবি দেখে অবাগ হয়ে যায় সানজিদা। মোবাইল রেখে চলে যায় সে।


সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেস হয়ে বাড়িতে আসার জন্য রেডি হচ্ছি। এর মধ্যে ভাবি এসে বলছে তুষার  আজ যেও না। কালকে আমরা এক সাথে যাব। তোমার ভাইয়ের অফিসে যেন কি কাজ আছে তাই খুব ভোরে চলে গেছে। বাধ্য হলাম থেকে যেতে। সকালের নাস্তা খেয়ে আমি গাছের নিচে একা বসে আছি। সানজিদা  আমাকে দেখে কাছে এসে বসে। আমার পাশে বসেই গল্প শুরু করে দেয়। গল্পের এক পর্যায়ে সানজিদা  বলছে মামা তোমার মোবাইলটা দাও।
কি করবে মোবাইল দিয়ে?
দাও না মামা,
তুমি এমন করো কেন?
এই নাও।
এইতো আমার লক্ষি মামা।
আচ্ছা মামা তুমি প্রেম করো।
আমি তো ওর কথা শুনে অবাগ হয়ে গেলাম। এত টুকু পুচকে মেয়ে আবার প্রেম ও বুঝে। আর বুঝবে না কেন?
স্টার জলসা,
জি বাংলা,
দেখে কথার বলা শিখার আগেই তো প্রেম শিখে। আর বাংলা নাটক তো এখন প্রেম ছাড়া হয়ই না। আজ ললিতার এমন প্রশ্ন করা অস্বাভাবিক কিছু না। এর জন্য আমরা দায়ী, আমাদের বিবেগ আর আমাদ সংস্কৃতি দায়ী। প্রথমে অবাক হলেও এখন স্বাভাবিক বলেই মেনে নিছি। মোবাইলের গ্যালারি থেকে একটা ছবি বের করে আমাকে দেখিয়ে বলছে, আচ্ছা মামা এটা নিশ্চয় মামি।
আমি ওর কথা শুনে একটু অবাগ হয়ে মোবাইলের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি এটা সুলতার ছবি। সুলতানার ছবি যে মেমুরি কার্ড এ ছিলো সেটা তো মা ভেঙ্গে ফেলেছে। এ ছবি কোথা থেকে আসল। একটু অবাগ হয়েই দেখছিলাম সুলতানাকে। অনেকদিন হয়ে গেছে সুলতানাকে দেখি না। খুব মন চাচ্ছিছিলো সুলতানাকে এক পলক দেখতে। ছবিটা পেয়ে ভালোই হলো মাঝে মাঝে অন্তত সুলতানার ছবি দেখে মনকে শান্ত করতে পারব। আমার কান্ড দেখে সানজিদার আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না। আজে বাজে সিরিয়াল দেখে মেয়েটা বড় বেশি পাকনা হয়ে গেছে।
মামা,  মামিকে দেখতে কিন্তু হেব্বি। তোমার সাথে দারুণ মানাবে।
আমি অবাক হয়ে ললিতার কথা শুনছিলাম আর অপলক দৃষ্টিতে মমিতাকে দেখছিলাম। কিছু সময়ের জন্য কল্পনায় চলে গেছিলাম।
মামা, মামা, ও মামা
হ্যাঁ বলো
ভাব তো ভালো বুঝতাছি না। বড় হয়ে গেছ দেখছি। দাড়াও বাড়ি গিয়ে নেই আগে, দাদুকে বলব লক্ষি একটা মামি এনে দিতে। এবার আমাকে তোমার প্রেমের গল্প শুনাও।
তুমি কি পাগলী হয়ে গেছ। আগে বড় হও পরে শুনাব।
মেয়েটি হাত তোলে আমাকে বলে দেখ আমি কতো বড় হইছি। তাছাড়া আমি নিয়মিত আত্মত্যাগ সাহিত্য, মাঝের বাড়ি পড়ি। এমনকি জহির রায়হানের  এর লেখা “বরফ গলানো নদী”, ”আর এক ফাল্গুন”  উপন্যাস পড়েছি। আমার অনেক ভালো লাগে জহির রায়হানের  এর লেখা।

আগেই বলেছিলাম মাঝে মাঝে আমি সানজিদার সাথে কথা বলে পেরে ওঠি না। আজও পারলাম না। মেয়েটির মামা ডাক শুনে মনটা ভরে যায়। তাই ওর কোন চাওয়া অপুর্ণ রাখি না। তাই বাধ্য হলাম বলতে।
শুন তাহলে মেয়েটির নাম সুলতানা। আমি আর ওই একই স্কুলে একই ক্লাসে পরতাম। আমি সেই হাই স্কুল থেকে ভালবাসি। আমি মমিতাকে পাগলের মত ভালবাসি। একসময় সেও আমাকে অনেক ভালবাসত। হঠাৎ করে সুলতানা  আমাকে একা ফেলে দুরে সরে যায়। আর সেই থেকে আমি নির্বোধ মানুষের মত বেঁচে আছি। সুলতানার ভালবাসার অভাবে আমার হৃদয় জুড়ে আজ আগ্নেয়গিরির অগ্নি শিখা জ্বলছে।
আমার কথা শুনে সানজিদার চোখ দিয়ে বৃষ্টি ঝড়ছে। আমি সুলতানার ছবিটি দেখে এতটাই আবেগ প্রবন হয়ে পড়েছিলাম যে নিজের বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাইতো নিরবোধ এর মতো এত ছোট্ট একটা মেয়ের সাথে গল্পটি শেয়ার করলাম। এখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি আর গল্প আগে না বাড়িয়ে থেমে গেলাম।
সানজিদা : মামা থামলে কেন?
পরে কি হল?
মা মনি আজ আর কিছু বলতে পাচ্ছি না। অন্যদিন তোমাকে বাকি অংশ শুনাব কেমন।
ওকে মামা। চল রুমে যাই। সবার সাথে আড্ডা দিলে তোমার ভালো লাগবে।
ওকে তাই চল। সবার সাথে গল্প বলতে বলতে দিন শেষে রাত হলো। রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেস হয়ে বাড়ি চলে আসলাম। বাড়িতে এসে পাকনা মেয়েটা আম্মুকে সব বলে দিছে। সুলতানা  নাম শুনতেই তো আম্মুর বুঝার আর কিছু বাকি রইল না। সুলতানা  সম্পর্কে আম্মু সব জানে। আমার জীবনে বেস্ট ফ্রেরেন্ড আমার আম্মু। তাই আম্মুকে ছোট থেকেই সব শেয়ার করতাম। সুলতানার কথা, সানজিদার মুখ থেকে শুনার পর তো বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছে। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই পরিবারের বয়ষ্করা মেয়ে দেখা শুরু করে দেয়।
এক পর্যায়ে বিয়েও ঠিক করে ফেলে। আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলে। সমাজে সম্মানের কথা চিন্তা করে পরিবারের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু না বলে সব নিরবে মেনে নিলাম। গায়ে হলুদ এর আগের দিন বাড়ি ভর্তি হয়ে গেল মেহমান এসে। সবাই খুব আনন্দ করছে। কিন্তু আমার মনে বিন্দু মাত্র আনন্দ নেই। সুলতানার কথা ভেবে মন সর্বদা ব্যাকুল হয়ে আছে। নিজের ভিতরে অস্তিরতা শুরু হয়ে গেছে। সুলতানার সাথে এক মিনিট কথা বলার জন্য খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
তবে কল দিয়ে কি বলব।
আমার কথা শুনে সহ্য করতে পারবে কি মেয়েটি?
এসব কথা ভাবতে ভাবতে আর কথা বলা হল না সুলতানার সাথে। বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়েকেই বউ সাজিয়ে নিয়ে এলাম। বাস্তবতাকে কোন ভাবে মেনে নিতে পাচ্ছি না। কি থেকে কি হয়ে গেল কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব এলোমেলো হয়ে গেল। নিজের মনের অস্তিরতা কাউকে বুঝতে না দিয়ে সবার সাথে মজা করে চলে গেলাম শুয়ার ঘরে। শুয়ার ঘরে গিয়েতো রিতি মত অবাগ হলাম। আমার খাটের ওপর এটা কে বসে আছে। কতক্ষণ নিরব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। মেয়েটি খাট থেকে নেমে এসে সালাম করতে শুরু করল। তৎক্ষণে মনে পড়ল আমি তো বিয়ে করেছি। মেয়েটি সালাম করে আমার সামনে দাড়িয়ে রইল। আমি মেয়েটির নাম জানি না, আর কোনদিন দেখিও নাই। আজই প্রথম দেখেছি। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর সময় কি নাম জানি বলে ছিলো মনে পড়ছে না। ইদানিং কেমন জানি সব ভুলে যাই। শুধু ভুলতে পারি না সুলতানার কথা। একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে থাকতে হবে ভেবে নিজের কেমন জানি লাগছে। নিজেকে মেনে নিতে পাচ্ছি না। আজ তো এই মেয়েটির জায়গায় মমিতার থাকার কথা। কিন্তু কোথায় আমার মনের রাজ্যের মহারানী।
সুলতানা কেন আমার সাথে এমন করল?
এখন নিজের মাঝে আরো অস্তিরতা বেড়ে গেল। এ দিকে মেয়েটি আমার সামনে দাড়িয়ে আছে, এখন কি বলব ভেবে পাচ্ছি না, হঠাৎ করে মুখ ফসকে বেরিয়ে এল তুমি যাও শুয়ে পড়, রাত জেগো না। মেয়েটির চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চাচ্ছে। এখন যদি সে কিছু বলে তাহলে মাথা গরম হয়ে যেতে পারে। তাই কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, জোড়েধমক দিয়ে বলে ওঠলাম,
তুমি এখনো দাড়িয়ে আছো কেন?
তোমাকে শুয়ে পড়তে বলছি না।
যাও বলছি। মেয়েটি আমার কথা শুনে আর দেরি না করে শুয়ে পড়ল।
আমি আর দেরি না করে বাহিরে চলে আসলাম। হাটতে হাটতে দোকানে চলে আসলাম। এসে দেখি দোকান বন্ধ। দোকানদার কে ডেকে তুলে এক প্যাকেট সিগারেট আর কয়েল নিয়ে চলে আসলাম রুমে। রুমে এসে কয়েল জালিয়ে শুয়ে পড়লাম ফ্লোরে। শুয়ে শুয়ে একটার পর একটা সিগারেট জালাচ্ছি আর সাথে নিজের ভিতরটাও।  রাত শেষে ভোর হল। সবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আজ আবার শুশুর বাড়ি থেকে মেহমান আসবে আমাদের বাড়ি। এদিকে কিছুক্ষণ পর পর আশে পাশের বাড়ির মহিলারা আসছে নতুন বউকে দেখতে। এসব দৃশ্য দেখে মেজাজটা আরো খারাপ হচ্ছে। আজ তো সুলতানাকে দেখতে আসার কথা। ঐ মেয়েটির জায়গায় সুলতানার থাকার কথা।
 কিন্তু সুলতানা কোথায়?
 কোথাও যে সুলতানাকে খুজে পাচ্ছি না। শুধু বুকের ভিতরটা তার জন্য হাহাকার করছে। এদিকে আবার খুব টেনশন হচ্ছে, রাতে মেয়েটার সাথে যে খারাপ ব্যবহার করছি তা যদি আম্মুকে বলে দেয়, তাহলে আম্মু খুব কষ্ট পাবে। এ বিষয়ে মেয়েটার সাথে কথা বলা দরকার। মেয়েটি যে আম্মুর সাথে বসে আছে।
ডাক দিব কিভাবে?
আর এখন না বলে দিলেও তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। নামও তো জানি না। এখন যে কি বলে ডাক দিব ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ মাথায় আসল সানজিদাকে ডাক দেই। সানজিদাকে দিয়ে ডাকিয়ে আনি। আমি আর দেরি না করে সানজিদাকে দিয়ে মেয়েটাকে ডেকে আনলাম।
সানজিদা : এই যে মামা, মামিকে এনে দিয়ে গেলাম। তোমরা কথা বল। আমার অনেক কাজ আছে। আমি গেলাম।
সানজিদার  কথা শুনে মেয়েটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে শাড়ির আচলে মুখ ডেকে মুচকি মুচকি হাসছে। আর আমি খাটের উপর শুয়ে আছি। অনেক কষ্টে মিষ্টি হেসে বললাম বস। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে খাটের ওপর বসল।
আচ্ছা তোমার নামটা জানি কি?
মেয়েটি আমার কথা শুনে অবাগ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর অবাক হওয়ারই কথা। বিয়ে করে ঘরে তোলে এনেছি,
অথচ তার নামটা জানি না?
আমি বুঝতে দিলাম না যে আমি তার নাম জানি না। মেয়েটিও কিছু বুঝতে না পেরে নাম বলে দিল।
কবিতা।
কেন আমার নামটা কি খারাপ?
আরে না, অনেক সুন্দর নাম, আর তোমার মুখ থেকে এত সুন্দর নাম শুনার মজাটাই আলাদা।
আমার কথা শুনে মেয়েটি মনে হয় লজ্জা পেয়েছে। রাতে তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি, তার জন্য সরি। আসলে আমার মন ভালো নেই। তাই তোমার সাথে খারাপ ব্যহার করছি। প্লিজ কিছু মনে করো না।
ওকে, একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম!
ওকে বল
আপনি সিগারেট খান কেন?
আমি সিগারেট এর গন্ধ সহ্য করতে পারি না।
কই আমি সিগারেট খাই না তো!
সিগারেট আমাকে খায়।
প্লিজ রুমে আর সিগারেট খাইয়েন না।
ট্রাই করবো।
আচ্ছা আমাকে আপনার পছন্দ হয় নাই?
কেন এমন প্রশ্ন করতাছ জানতে পারি কি?
আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেন।
হুম হয়েছে।
তাহলে কেন আমাকে একা খাটে রেখে আপনি ফ্লোরে শুয়েছিলেন।
তুমি বুঝবে না। তুমি এখন যাও। আর হ্যা রাতের ব্যবহারের কথা কাউকে বল না প্লিজ।
আগে বলেন। নয়তো আমি আম্মুকে সব বলে দিব।
শুনে তুমি সহ্য করতে পারবে না। দুই এক দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
না কিছু হবে না,বলেন।
না শুনে যখন ছাড়বে না।
শুনো তাহলে
আমি এক পাষাণীকে এ মনে জায়গা দিয়েছি। যে আমাকে ভুলে গিয়ে মনে হয় খুব সুখে আছে। কিন্তু আমি তাকে কোন ভাবে ভুলতে পাচ্ছি না। আজ তোমার জায়গায় ওর থাকার কথা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মল পরিহাস, তাই ওর জায়গায় তুমি। আমরা স্কুল লাইফ থেকে এক সাথে পড়তাম। তার নাম সুলতানা। আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। স্কুল লাইফ থেকেই আমি সুলতানাকে খুব ভালবাসতাম। কিন্তু সুলতানা  ভালবাসে অন্য এক ছেলেকে। সুলতানা আমাকে বলেছিলো ছেলেটি সম্পর্কে আমার ভাই লাগে। একটা মেয়ের সাথে প্রেম করত সে। মেয়েটি তাকে রেখে চলে গেছে। তারপর থেকেই সুলতানা  সাথে ফোনে কথা বলত। প্রতিদিন ফোন করে কান্না করত ছেলেটি। আমি ওর কান্না শুনে ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। আসতে আসতে ভালবাসতে শুরু করি তাকে। ভালোই চলছিল আমাদের সম্পর্ক। হঠাৎ করে ছেলেটি আমাকে ছেড়ে দুরে সরে যায়। আমি অনেক কান্না করেছি একটু ভালবাসার জন্য। কিন্তু আমাকে ভালবাসা দিবে তো দুরের কথা, আমার সাথে ভালোভাবেই কথাই বলে না। আমাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। ওর জন্য কান্না এখন আমার প্রতি রাত এর সাথী। সুলতানা  অন্যজনকে এত ভালবাসত আমি জানতাম না। আমিও তাকে স্কুল জীবনে কোনদিন বলতে পারি নাই। কলেজে এসে একদিন দেখা হয় আমার মমিতার সাথে। চেয়েছিলাম ওই দিন আমার মনের কথা বলব সুলতানাকে। ঐ দিন ছিলো সুলতানার কলেজে বিদায় অনুষ্ঠান। সুলতানাকে দেখে অনেক আনন্দিত লাগছিলো ঐদিন। আর সুলতানাকে দেখে কোনদিন মনে হয় নাই ঐ কারো সাথে রিলেশন করে বা করবে।
কেমন জানি ছিলো সুলতানা?
খুব রাগী একটা মেয়ে। ঐ দিন কেন জানি মন বলল আজ বলার দরকার নেই। চলে আসলাম বাড়ি। ঐদিন না বলে আমার জন্যই ভালো হইছে। ঐদিন বললে হয়তো সুলতানাকে পেতাম না। কেননা সুলতানার মনে তখন আর একজন বাসা বেধে আছে। কোন ভাবেই সুলতানাকে বলতে পারছিলাম না আমার মনের কথা গুলো। বলতে না পেরে অনেক যন্ত্রনা হচ্ছিল নিজের মাঝে।
এখন কি করেই বা বলব?
 সুলতানা কোন কন্টাক্ট নেই আমার কাছে। একদিন এক বন্ধুর কাছ থেকে সুলতানার কন্টাক্ট নাম্বার নেই। পরে কথা হয় আমার। খুজে পাই ফেসবুক একাউন্ট। পরে চ্যাট হয় ফেসবুক এ। আমি দেরি না করে প্রপোজ করে বসি। ওই আমার কাছ থেকে সময় নেয় ভাবার জন্য। কয়েকদিন পর না করে আমায়। আমি তাকে মন খারাপ করে বলেছিলাম না ই যখন করবে তখন সময় নেওয়ার কি দরকার ছিলো। সে আমার কথা শুনে আমাকে বুঝানোর জন্য ফোনে কথা বলে। আমাকে সরাসরি না করে দেয়। আমার পরিবার থেকে এগুলো মেনে নিবে না। আর আমি একই ভুল দ্বিতীয়বার করব না। আমি তাকে ফেসবুক এ প্রতিদিন মেসেজ করতাম। এই মেসেজ করার জন্য একদিন তার একবান্ধবী আমাকে কল দিয়ে অনেক কথা বলে। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম ঐদিন। রাগে তার নাম্বার ডিলেট করে দিয়েছিলাম। নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম সবাইতো ভালবেসে আপন করে পায় না। তাই আমিও পেলাম না। গল্পটা এখানেই শেষ হলে ভালো হত।
কিন্তু নিয়তীর খেলায় আরও দুঃখ লেখা ছিল আমার কপালে তাই শেষ হয়েও হল না। কয়েকদিন পর সুলতানার ওই বান্ধবী আমাকে ফেসবুক এ মেসেজ করে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করছে। আমার অনেক রাগ হচ্ছিল তার ওপর, তারপর ও উত্তর দিচ্ছিলাম আমি। ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করার পর আমাকে একটা নাম্বার দিয়ে কল দিতে বলে। আমি জিজ্ঞেস করলে বলে এটা সুলতানার নাম্বার সুলতানা আপনাকে কল দিতে বলছে। আর হ্যাঁ সুলতানা  আমার বেস্ট ফেরেন্ট, আজ থেকে ওর দায়িত্ব আপনাকে দিলাম। ওরে কোন কারণে কষ্ট দিয়েন না। আপনা সুখী হন। আমি সুলতানাকে কল দেই। কথা হয় তার সাথে। শুরু হয় আমাদের রিলেশন। আমাদের সম্পর্ক ভালোই চলছিল। প্রেম এ যদি অভিমান না হয় তাহলে প্রেম জমে ওঠে না। মাঝে মাঝেই দুজনে খুব অভিমান করতাম। একদিন আমি অভিমানে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে রক্তাক্ত করি। অসুস্থ হয়ে পড়ি আমি। একপর্যায়ে দুরে সরে যায় সুলতানা। আমি আবার কাছে আনার চেস্টা করি। সুলতানা  তার বোনকে বলে আমার বিষয়ে সব কিছু। সুলতানার বোন সুলতানার কন্টাক্ট নাম্বার পরিবর্তন করে দেয়। তারপরও আবার আমাদের কন্টাক্ট হয় প্রতিদিন। আমাদের সম্পর্ক খুব ভালোই চলছে। মমিতা ও আমাকে প্রচন্ড ভালবাসে।আমাকে ছাড়া কিছু বুঝে না মেয়েটি।
আমিও তাকে পাগলের মত ভালবাসি। সুলতানা আমাকে শুধু একটা কথাই বলত আমাকে ছেড়ে চলে যেও না। আর আমাকে কখনো ভুল বুঝ না। হঠাৎ এক ঝড় এসে আঘাত করে আমাদের রিলেশনে। সুলতানা আমাকে দুরে সরে যেতে বলে। কারণ জানতে চাইলে বলে না আমায়। আমি খুব টেনশনে আছি।
কি এমন ভুল করছি?
যে কারণে আমাকে দুরে সরে যেতে হবে। ভেবে পাচ্ছি না কিছু। আমি অসুস্থ হয়ে মেডিকেল এ ভর্তি হই। ডক্টর বলছে অপারেশন করতে হবে। না হয় পরে আরো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমি রাজি হয়ে যাই অপারেশন এর জন্য। সুলতানা  জানে আগামিকাল আমার অপারেশন হবে। ওই জানতো ওর সাথে কথা না বলে আমি রাত এ ঘুমাতে পারি না।  অথচ সে আমার সাথে কথা বলা বাদ দিছে। খুব কথা বলতে ইচ্ছে আমার।
কিন্তু কি কর?
ওই আমাকে না করে দিয়েছে আমাকে আর ভালবাসতে পারবে না। তাই হয়ত কথা বলবে না আমার সাথে।  যে মানুষ সামান্য স্বর্ধি লাগলে আমাকে দিনে অন্তত ২০টা কল দেয়। সে এত বড় সমস্যার কথা শুনে একবার ও কল দিলো না আমায়। মনে হয় তার বিশ্বাস হয়নি আমি অসুস্থ। আমি বার বার সুলতানার কথা বলছিলাম। আমার বাবা মা ও জানত আমি সুলতানাকে ভালবাসি। তাই মা আমাকে বলত তোর অপারেশন শুরুর আগে দেখবি ঠিক সুলতানা  চলে আসছে। আমিও ভেবে ছিলাম তাই। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি। আমার অপারেশন এর সময় হয়ে গেল সুলতানা  এলো না। আমি রাগে বলেছিলাম মা আমি যদি মরে যাই বা বেঁচে থাকি আপনি আর এই জায়গায় থাকবেন না। আমাকে দুরে কোথাও নিয়ে যাবেন। মা আমাকে কথা দিয়েছিলো। আল্লাহর রহমতে এক ঘন্টায় আমার অপরেশন ভালোভাবে শেষ হয়েছে। বিকাল দিকে আমার জ্ঞান ফিরে। আমি মাকে বার বার সুলতানার কথা বলছিলাম। মা ও তোতক্ষণে রেগে গেছে। যাকে আমি এতটাই ভালবাসি সে কি না আমাকে এক নজর দেখতে আসতে পারল না। এটা কেমন ভালবাসা ছিলো তার। তাই মা ঠিক করে আমাকে নিয়ে আর ঐ এলাকায় যাবে না। আমাকে ৪দিন পর হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়। আমাকে নানির বাড়ি নিয়ে যায় মা। আমি সুলতানাকে বার বার বুঝিয়েছি, যা হবার হইছে তুমি চলে এসো। চলো আমরা আগের মত হয়ে যাই। বার বার বলেছি অন্তত আর একবার ভেবে সিগ্ধান্ত নাও। কিন্তু সুলতানা  নাছর বান্দা। সে তার সিগ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবে না। আমার বন্ধুকে দিয়ে বুঝালাম কোন কাজ হল না। আমাকে দুরে সরিয়ে দিলো। একিদন তার নিষ্পাপ ভালবাসা নিয়ে প্রতারনা করেছিলো অন্য কেউ। আজ সে আমার ভালবাসা নিয়ে প্রতারনা করল। আমার নিষ্পাপ ভালবাসায় অবিশ্বাসের চাদর ছুড়ে দিয়ে আমাকে মিথ্যা অববাদ দিয়ে দুরে সরে গেল সুলতানা । আমরাও চলে আসি নানার এলাকায় আমাদের আরেক বাড়িতে।
কবিতা আমার প্রেমের কাহিনী শুনে এতটাই দুর্বল হয়েছে আর তাকে এতটাই আঘাত করেছে যে তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। আচ্ছা আপনি সুস্থ হওয়ার পর তার সাথে দেখা করতে চাননি?
হ্যাঁ চেয়েছিলাম।
সে ও দেখা করতে চেয়েছিলো। আমি দেখা করতে গেছিলাম। কিন্তু তার সময় হয়ে ওঠেনি।
আচ্ছা চলে আসলেন যখন সে কি না করে নাই?
হুম করছে।
বলেছে তোমরা চলে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। আমি এতোটাই খারাপ যে যার প্রভাব পুরো এলাকায় পড়ছে। যার জন্য তোমরা এই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছো।
আপনি তার সাথে আর কোন কথা বলেন নাই।
হ্যাঁ বলতে চেয়েছিলাম,
আমার বাবা, মামা তাদের বাড়িতে যেতে চেয়েছিলো তাকে বুঝাতে আর তার মায়ের কাছে বলে তাকে আনতে। আমি বলেছিলাম আমি আগে সুলতানার  সাথে কথা বলে নেই। আমি বলার পর যাবেন। ঐদিন ফেসবুক এ চ্যাট করেছিলাম।
ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করার পর বলে ছিলাম মামা তোমাদের বাড়ি যেতে চায়।
তুমি কি বল?
আমি কিছু জানি না। আর এখন আসলে সমস্যা হবে।
আর কেন ই বা উনি আসবে?
তোমার মায়ের কাছ থেকে তোমাকে নিতে আসবে।
তুমি আর আমার সাথে কথা বলো না। আমার ভালো লাগে না।
যার কাছে তোমার কথা ভালো লাগে না তার কাছে গেলে ভালবাসাতো দুরের কথা একটু হাসতেও পারবে না। আমি কোন দিন সুলতানাকে ভুলতে পারব না। কিন্তু কষ্ট একটাই আমাকে বিশ্বাস না করে ভুল বুঝে দুরে সরিয়ে দিলো। আজ আমি ওর মতো করে কেদেই ওর কাছে একটু ভালবাসা চেয়েছিলাম। ভালবাসা তো পেলাম ই না। আর ও কষ্ট নিয়ে চলে আসলাম। এখন আমি সুলতানার থেকে অনেক দুরে সরে আছি। নিজেকে আড়াল করে ফেলি সুলতানার কাছ থেকে। কিন্তু মন থেকে আড়াল করতে পারলাম না সুলতানাকে। আর কখনো পারবোও না হয়তো। আজ সুলতানা  আমার চোখের পানির কারণ। এখন আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে সুলতানা। এখন আমি সারা রাত গল্প পড়ে আর গল্প লিখে পার করি। সুলতানাকে এখনো অনেক ভালবাসি আমি। তাই তাকে এখনো নিজের মাঝে নিজের কাজের মাঝে বড্ড বেশি মিস করি। এখনো মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকি সুলতানার একটি কলের জন্য। সুলতানা তোমাকে বড্ড বেশি ভালবাসি।
পারলে চলে এসো।
আমি তোমার পথ চেয়ে বসে আছি। কিছুদিন পর সুলতানা  আবার ফিরে আসে আমার জীবনে। পুরনো ভুল সুদ্রে নিয়ে আমরা খুব ভালোভাবে জীবনকে উপভোগ করছিলাম। দুজনে মিলে সংসার করার স্বপ্ন দেখতাম। রাতভর ফোনে কথা বলতাম। কিভাবে সুন্দর সুখী পরিবার গঠন করা যায় সেই কথা চলত সব সময়। আমি ওর কথা মত সব করতাম। হঠাৎ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমি। সুলতানাকে আর আগের মত সময় দিতে পারি না। আমার পরিবারে দুর্যোগ নেমে আসে। দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার আগেই সুলতানা  নিজে পাল্টে ফেলে। নিজেকে নতুন করে সাজাতে শুরু করে। তার নতুন জীবনে সবাই আছে। শুধু নেই আমি আর আমার নিষ্পাপ ভালবাসা। আমি আবারও তাকে বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সে আমার কোন কথা শুনতে রাজি হয় না। আমার বন্ধু নামের শত্রু একজনের পরোচনায় পড়ে আমার নিষ্পাপ ভালোবাসাকে গলা টিপে হত্যা করে। আজ তার কাছে আমার চেয়ে সেই শত্রুই প্রিয়। সুলতানা  আমাকে ভালবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে আমার গুছানো জীবনকে এলোমেলো করে দিয়ে নিজেকে নিয়ে খুব সুখে আছে। আর আমার বুকে বইছে কালবৈশাখী ঝড়। যে ঝড় আমার হৃদয়টাকে খন্ড-বিখন্ডিত করে দিয়েছে। আমি এখনো তারে পাগলের মত ভালবাসি।
গতকাল তোমার সাথে যে আমার বিয়ে হয়েছে তা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হইছে। এ বিয়েতে আমার কোন মত ছিলো না। আর আমার মনে অন্য একজনের বসবাস। তাই তোমাকে আমি ওইভাবে নিতে.
 পারচ্ছি না।
আর কোন দিন নিতে পারব কি না?
তাও জানি না!
যদি কোন দিন আমি তাকে ভুলতে পারি আর তার মায়া কেটে ওঠতে পারি সেদিন তোমাকে আপন করতে পারব। আমার কথা গুলো শুনে কবিতার সুন্দর চেহারা কালো হয়ে গেল নিমিশেই। কতক্ষণ চুপ করে থেকে
হুম আমি সব বুঝতে পারছি। আপনি কোন চিন্তা কইরেন না, আমাদের দুজনের এই দুর সম্পর্কের কথা কেউ বুঝতেও পারবে না। আমি সব মানিয়ে নিব।
আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি
হুম বল
আপনি কি সুলতানার  সাথে কোনভাবে যোগাযোগ করেছেন?
হুম সব শেষ একটা চিঠি দিয়ে ছিলাম। কিন্তু কোন উত্তর পাই নাই।
কি লিখেছিলেন ওই চিঠিতে?

শুনো তাহলে

প্রিয় পাগলী,
তোমাকে পাগলী নামে ডাকার দুঃসাহস আর সৌভাগ্যই বল কোনটাই আমার নেই। তবু ভুলেই ডেকে ফেললাম। জানই তো ভুল নিয়ে মাতামাতি করে লাভ নেই। ভুল তো তুমিও করেছিলে একদিন আমাকে ভালবেসে। আমি কি মাতামাতি করেছি?
আমি অনেক বেশি ভাল আছি। অবাক হলে তাই না, প্রথমে তোমার কথা জানতে না চেয়ে আমার কথা বললাম দেখে। জানি, তুমি মুখে না বললেও তোমার মন আমার কথাই আগে জানতে চায়।
তোমার কথা আর জানতে চাইলাম না।কষ্ট দিয়ে লাভ কি ?
তুমি যে ভাল নেই তা অজানা নয়।
প্রথমে তোমাকে ধন্যবাদ আমার কথা মতো সেদিন দেখা করার জন্য। তোমাকে বলার অনেক কথা আছে আমার, কিন্ত আজ হয়তো তোমার হাতে আমার কথা গুলো শুনার মতো সময় নাই। একদিন তোমার মনে আমার বসবাস ছিল। আজ হয়তো অন্য কেউ বাস করছে। জানি তোমার চিঠি পড়তে ভালো লাগে। তাই লিখে পাঠালাম।
তুমি মুখে না বলেও তোমার মন সব সময় জানতে চায় আমি ভালো আছি কি না?
ভালো থাকা এখন ততটাই কঠিন। যতটা কঠিন ভুলে থাকা। ভালো থাকার আশায় সিগারেট ছেড়েছি। জায়গা বদলেছি। ঘর দুয়ার সঙ্গ সব ছেড়েছি নিজেকে রুটিন মাফিক বেঁধে ধরেও ভালো থাকতে পারিনি। হয়তো আর ভালো হতে পারবো না।
আমার মতো অক্ষরজীবীদের চোখে অশ্মরী জন্ম নেয় আর জানতে ইচ্ছে হয় তুমি ভালো আছো তো?
তুমি হয়ত বলবে ভালোই থাকি সব সময়। আর ভালো-খারাপ থাকাটা নিজের কাছে। হয়তোবা তাই। কিন্তু নিজেকে কার কাছে রাখবো বলতে পারো?
আমার ভালো থাকা আর আকাশ দেখা এখন সমান কথা। তুমি একদিন স্বনির্ভর হবার স্বপ্ন দেখাতে!
আজ সেই তুমি স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলে।
ভুলে গেছো?
ভোলাটাই স্বাভাবিক। ভুলকুমারী বলে কথা। আগেও তো একটুতেই আমাকে ভুলে যেতে। আমাকে এখন আর তোমার মনে পড়ে না।
আর মনে পড়বেই বা কিভাবে?
মনে রাখার মতো কোন কাজই করতে পারি নাই। সুলতানা ভুলে থাকার আরেক নাম অভিমান। আর সেই অভিমানকেই পাশবালিশ ভেবে জড়িয়ে আছো তুমি। তোমার মতো মেঘালয়ের পাহাড় গুলোও যেন আজকাল অভিমান করে আছে। তার গায়ে জমে থাকা মেঘগুলো অবচিত। তিলতিল করে জমে থাকা অভিমান, তোমাকে ছেড়ে আমাকেও গ্রাস করে নিচ্ছে ক্রমশ। তাই বোধ হয় চোখের উত্তাপে কাছের সম্পর্ক গুলোতে ছড়াচ্ছে ম্লান হবার পূর্বাভাস। মনে হয় তোমার নরম তুলতুলে হাত দুটোতে পাথরের মতো অসমান কোন চড় জেগেছে। যেন অদৃশ্য কংক্রিট। আলসে ভরা সেই সব ঘুমে ভরা বা শুয়ে শুয়ে এস.এম.এস এ কথা বলা দুপুর তোমার মুঠোতে এখন এনে দিয়েছে হাজার রকম কাজ আর কাজ। দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে তোমার বৈভব। তোমার মেসেজটা পড়ে ঐদিন খুব হেসেছিলাম। তোমাকে দেখে নাকি আমি এফবি থেকে বের হয়ে গেছি। মনে রাখার ভয়ে মানুষ যে এভাবে ভুলে যায় সেদিনই প্রথম জেনেছিলাম। আদর করে তোমার নাম রেখেছিলাম ‘পাগলী’নামটা তোমার খুব পছন্দ হয়েছিল। আমি কিছু বলতেই তুমি খুব মজা করতে।
আমি রেগে গেলে মিষ্টি হেসে বলতে রাগ করো কেন?
আমি না তোমার পাগলী,তাই না হয় একটু পাগলামী করেছি তোমার সাথে। এটাও ভুলে গেছ নিশ্চয়। আমিও সব ভুলে গেছি,আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবন, আত্মীয় স্বজন, পরিবার, বন্ধু বান্ধব সব। তুমি বলতে পারো এসব আমার জন্য হয়েছে এ কথা সত্য। কিছু কাজ আমি ইচ্ছে করেই করেছি, কিছু কাজ পরিস্থিতির শিকার হয়ে করছি।
কেন জান?
তুমি ধনীর দুলানী। অভাব কি জিনিস কোন দিন তুমি বুঝ নাই। তাই মনে খুব ভয় জাগত,
তুমি আমাকে ভুলে যাবে নাকি?
তুমি আমাকে ভালবাস নাকি মুখে বল আমাকে ভালবাস! কিন্তু আজ বুঝলাম তুমি আমাকে কখনো ভালবাস নাই এখনো বাস না। তুমি তো অতীত ভুলে খুব সুখে আছো। ভুলে গেছো সেই ১৪ ফেব্রুয়ারি  এর কথা। ভুলে গেছো সেই ১ লা অক্টোবর এর কথা। ভুলে গেছো সেই ১৫ নভেম্বর এর কথা। সেই অনন্ত ভবন থেকে আসার পর তুমি বলেছিলে হয়তো আজকের আগে বাড়ি থেকে চাপ দিলে অন্য কোথাও বিয়ে বসতাম। কিন্তু আজকের পর আমি আর অন্য কাউকে মেনে নিতে পারব না। তুমি কিভাবে আমাকে নিবে জানি না। তুমি তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে যাও। আর সেই তুমি ওই দিন বললে যে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে। এত অল্প সময়ে সব ভুলে গিয়ে নিজেকে কেমন নতুন ভাবে সাজিয়ে নিলে। তুমি তো শুধু আমার সাথে অভিনয় করে গেছো, যে অভিনয় বুঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি তোমাকে পাগলের মত ভালবেসে। তুমি বল আমি নাটক করেছি তোমার সাথে, তুমি যেহেতু বলেছো, হয়তো তাই করেছি আমি। তবে নাটকের মাঝে ভালবাসা ছিল সে ভালবাসা বুঝার মত ক্ষমতা তোমার ছিলো না এখনো নেই। কথায় আছে পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ,আমরা সবাই অভিনেতা। তাই আমিও একজন অভিনেতা।
কিন্তু নিজেকে একটা প্রশ্ন করেছো কখনো?
কত বড় অভিনেতা হলে নিজের অতীত ভুলে নিজেকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখা যায়। বা মমিতা বা।আমি আজ সত্যিই জিতে গেছি তোমার ভালবাসা বুকে আগলে রেখে। তবে তুমি হেরে গেলে আমার নিষ্পাপ ভালবাসার কাছে। তুমি বার বার বলেছো আমি তোমাকে রেখে অন্য কারো কাছে যেতাম। তোমাকে রেখে অন্য কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। আমি এতটাই বোকা যে তোমার এই কথা বুঝতে পারি নাই। আমার কাছে এর অর্থ এখন একদম পরিষ্কার, তুমি বার বার বলছো আমি বিয়ে করতাম যাতে করে আমিও এক শিকারীর শিকার হয়ে পড়ি। সারা জীবনের বাঁধনে বাঁধা পড়ি
কিন্তু আমি চাইনি পাহাড় সমান দুঃখ, বেদনা, কষ্টগুলি তোমার সামনে দাঁড় করাতে। অনেকের মত আমিও তো চাই আমার জীবনে দুঃখের পরে সুখ, বেদনার পরে আনান্দ, কষ্টের পরে শান্তি আসুক। আজ তো আমি দুঃখের সাগরে হাবু ডুবু খাচ্ছি। চাই না তুমিও তাই করো। আমি কখনো তোমাকে বুঝাতে চাই নি, যে একটি বৃক্ষ বড় বড় দাঁত ওয়ালা কাঠ কাটা করাত দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছ।অন্য ভাবে বিচ্ছিন্ন হলে হয়তো কথা ছিল না কিন্তু যে দিন সব চুড়ান্ত হলো সেদিন থেকে কয়েক দিন ধরে চলল বড় বড় দাঁত ওয়ালা কাঠ কাটা করাত দিয়ে আমার বুকের উপর মহড়া। থাক সে সব কথা। আমার সাথে যে অভিনয় করে মাঝ নদীতে ফেলে দিয়ে নৌকা নিয়ে তীরে চলে গেলে,ওই ভাবে কারো মন ভেঙ্গো না। তুমি তো কারো মন ভাঙ্গনা, মনের মাঝে তোমার জন্য যে জায়গা হয় সেই জায়গায় নদী ক্ষনণ করে ফেলো। তুমি হয়তো জান না, আজ তুমি যে মন এ আঘাত করলে সেই মন এ তোমার ই বসবাস ছিল। তুমি না বুঝে আঘাত করলে। আমার কথা শনে অভাক হলে তাই না। হয়তো মাঝে মাঝে আমাকে ভাবলে তোমার মন মেঘ হয়ে যায়।
তখন হয়তো তোমার খুব জানতে ইচ্ছে করে তোমার মতো আমারও এমন হয় কিনা?
সূর্যের মতো সত্যি এই যে নন্দিত হতে গিয়ে আমি বোধহয় তোমার কাছে নিন্দিত হয়ে গেলাম।
নিন্দিত হয়ে পুরোনো কথা ভেবে কি হবে?
সেসব কথা ভেবে মনকে মেঘ করো না। রোজ রাত জেগে তোমার কথা ভাবি, যখন খুব খারাপ লাগে তখন তোমাকে নিয়ে কিছু লিখি, আজ তোমাকে খুব মিস করছি তাই লিখলাম। এখন আমার খাতা কলম আর ফোন টাই সঙ্গী আমার। কেউ হয়ত জানবে না কোনদিন! হয়ত আমি আর খোলা আকাশ জানবে মন খারাপের কথা। জানবে আমার ভাবনাতেও বিরহের তুলির আঁচর পড়ে। বিরহের সুর বাজে। করুণ বিউগলের সাথে সাথে কেউবা সেখানে রাজত্ব করে বেড়ায়। আমাদের ফেলে দেয়া সোনালী সে সময়কার সব স্মৃতির পাতায় আজ বন্দি। আজকাল যখন তোমায় স্বপ্নে দেখি তখন নিজেকে হ্যাংলাটে মনে হয়।তোমার মায়াবী চোখ,কাজল কালো চোখ পাগল করা সেই হাসি আর তোমার কোমল হাতে লেখা এস.এম.এস খুব মিস করি ! মাঝে মাঝে চিৎকার দিয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এখন জীবনের সেই সোনালী দিন খুইয়ে পাথর যুগে এসে গেছি। পাথরের ভারে চোখ মেলতেই যতো যন্ত্রনা। প্রতি মুহূর্তেই সময়ের দাসত্বের অনুবর হয়ে যাচ্ছি, ভালো কিংবা ভুলে থাকার চেষ্টায় ক্রমাগত পরাজিত হবার শঙ্কায় ভুগছি। তুমি ভেবে নিও মুদ্রার এ পিঠের মতো জীবন হলেও আমি ভালো নেই। একটু একটু করে বিক্রি হয়ে যাচ্ছি সময়ের কাছে। আজও মনে হয়,
আমায় ছেড়ে একা থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার?
ভেবো না, ভীড়ের মাঝে যখন তুমি একা হয়ে পড়বে, কাছে থেকেও যখন সবাই দূরের কেউ হয়ে যাবে, আর নিজেকে খুব একা মনে হবে, ঠিক তখনই আমায় ভেবো, তোমার ভাবনা মাঝেই সঙ্গী হব। ব্যাস্ত এ শহর যখন নিশ্চুপ হয়ে যাবে, ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দও যখন খুব কানে লাগবে, তখন যদি অঝোর ধারার কান্নারা বুকে জমাট বাঁধে, মনে রেখো ,আমি অশ্রু হয়ে তোমার কাছেই ফিরে আসব।
প্রিয় গানটি শুনে যখন উদাস হবে, শুন্য দৃষ্টি যখন আমায় খুঁজবে, তখন যদি চেয়ে দেখো, একটু দূরেই আমায় পাবে।
মাঝরাতে যখন জানালার পাশে বসে আমায় ভাববে মোবাইলে আমার ছবি দেখে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরবে, আর কাঁদবে আমি নেই তো কি হয়েছে?
দূর আকাশের তারা’রা তো আছে, তাদের একজন হয়েই না হয় তোমার সাথে গল্প করব….।
তোমার বরের দিকে খেয়াল রেখো, তাঁকে ঘরমুখি করো, বেশি রাত বাইরে থাকতে দিও না, শাড়ীর আঁচলে বেঁধে রেখো বা ওড়নায়। পরিবারে যখন বাস করি তখন তো পরিবারের নিয়মে থাকতে হবে। আমার পরিবার এর মতে এখন আর আমার একা থাকাটা বেমানান। আমাদের সমাজের দম্পত্তিদের সুখি হওয়াটাই সকলের বড় লক্ষ্য। আর বুঝি সংসারে সুখি হওয়াটা নিজেদের উপর নির্ভর করে। তুমি তো ভালো করে জান কোন বাবা মা-ই চায় না তার ছেলে কষ্ট পাক, কষ্টে থাকুক, প্রতিটি রাত কাউকে ভেবে কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজাক, চায় না একবুক কষ্ট বুকে চেপে রেখে একজন নির্বোধ মানুষ হয়ে বেঁচে থাকুক। তাই পরিবার থেকে বেশি চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য। আর আমি ভালো করে জানি যে বিয়ে করে ব্যস্ত থাকার মধ্যে একটি জীবনের সার্থকতা থাকে। জীবন পরিপূর্ণ হয়। সমাজে পরিবারে একটি আলাদা মর্যদা পাওয়া যায়।
এসব জেনে কি হবে?
আমি যে তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। আমার মনে যে আজও তোমার বসবাস। আমি এখনো তোমার পথ চেয়ে বসে আছি। আমি যে তোমার দেওয়া ভালবাসা আগলে ধরে বেচে থাকতে চাই। যদি কখনো তুমি আমার ভালবাসার অভাব অনুভব করো,আমার ভালবাসার প্রয়োজন মনে করো,আমাকে কাছে ডেকো, পাশে পাবে। যদি কখনো ভালবাসার শুণ্যতায় ভুগ তাহলে চলে এসো, সব কিছুর অভাব থাকলেও ভালবাসার অভাব হবে না। তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, আছি, আর ওই দিন পর্যন্ত থাকব। তোমাকে খুব ভালবাসতাম, ভালবাসি, আর তোমার ভালবাসা বুকে নিয়েই পৃথিবী থেকে চলে যাব। তোমাকে খুব বেশি ভালবাসি। খুব মিস করব তোমায়। যদি সম্ভব হয় উত্তর দিও।
যাই হোক আজ অনেক কথা বললাম। ভুল হলে মাফ করে দিও। শরীরের যত্ব নিও। ভালো থেকো। অনেক অনেক ভালো থেকো।
ইতি,
তোমার পাগল

যখন সুলতানার জন্য চিঠিটা লিখি তখন কেন জানি মনে হল, চিঠিটার একটা ছবি তুলে রাখি। আজ মনে হচ্ছে কবিতাকে পড়ে শুনানোর জন্যই হয়তো ছবি তুলতে মনে হয়েছিল। চিঠি পড়ার পর কবিতার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ দুটি রক্তের মতো লাল হয়ে গেছে। আর ওর সুন্দর লাল টুকটুকে মুখটা কালো হয়ে গেছে।
কবিতা তোমার এসব শুনার দরকার নাই। তুমি এসব শুনে সহ্য করতে পারবে না।
না, কোন সমস্যা নাই। আপনি বলেন। এত দিন বইয়ে পড়েছি। তখন মনে হয়েছে গল্প মনে হয় লেখক বানিয়ে লিখে। কিন্তু আজ আপনার জীবন কাহিনী শুনে মনে হচ্ছে বইয়ে যা পড়েছি তা বানিয়ে লেখা না। হয়তো কারো জীবন থেকে নেওয়া।
দুজনে কথা বলার মাঝে হঠাৎ করে আম্মু রুমে চলে আসল।
আম্মু : কবিতা আমাদের বাড়ী তোমার কেমন লাগছে?
কবিতা : জি ভালো লাগছে।
আম্মু: কবিতা তোমার মন খারাপ কেন?
কবিতা: কই না তো মা।
আম্মু: সত্যি করে বল কি হইছে?
কবিতা: না আম্মু ছোট ভাইকে খুব মিস করতাছি তো!
আম্মু: তোমার ভাইকে মিস করতাছো নাকি তুষার  তোমাকে কিছু বলছে।
কবিতা: না আম্মু উনি কিছু বলে নাই। বসে বসে আমাদের বাড়ি নিয়ে গল্প করতাছি তো তাই এমন লাগছে। আর উনি খুব ভালো মানুষ।
আম্মু : হইছে হইছে এই বাদরটা সম্পর্কে এত সাপাই গাইতে হবে না। আমি ওর সম্পর্কে জানি। ওই ভালোভাবে কারো সাথে কথা বলে না। সবার সাথে একই রকম ব্যবহার করে। শুনো মা এই বাদরকে ভালো বানানোর দায়িত্ব কিন্তু তোমার।
কবিতা: ঠিক আছে মা। আপনি কোন চিন্তা কইরেন না।
আম্মু: তুষার শুন, কবিতা কিন্তু এই বাড়ির বউ না। কবিতা আমার মেয়ে। তোর কোন ব্যবহারে যদি ও কোন কষ্ট পায় তাহলে তোর কিন্তু রক্ষা নাই বলে দিলাম। আর এখন কোথাও যাসনে। মেহমান আসার সময় প্রায় হয়ে আসছে। বলেই আম্মু রুম থেকে বাহির হয়ে গেল। কবিতা এখনো মন খারাপ করে বসে আছে। দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। মনে হয় মেয়েটি মনে খুব কষ্ট পেয়েছে।
আর কষ্ট পাবেই না কেন?
মেয়েদের বিয়ের আগে এক রকম থাকে। বিয়ের পর তার সব কিছু তার স্বামীকে ঘীরে হয়। মেয়েটি স্বামীর ভালবাসা তো পেলই না।
বরং আর কোন সে তার স্বামীর ভালবাসা পাবে কি না?
তাও জানে না। হঠাৎ করেই কেন যেন মনে হচ্ছে মেয়েটিকে একটু হাসানো দরকার।
তাই দুষ্টামির ছলে বলে ফেললাম শুনছ আম্মু কি বলছে?
এই বাদরকে ভালো করার দায়িত্ব দিয়ে গেছে।
পারবে তো ভালো করতে?
আর আম্মুর কথা শুনে মনে হল আমাকে হয়তো আমাকে গুগুল থেকে ডাউনলোড করছে। তাইতো বলল তুমি উনার মেয়ে। তোমার কষ্ট আমার রক্ষা নেই।
কবিতা আমার কথাগুলো শুনে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল আপনার খুব হিংসা হচ্ছে তাই না।
হুম অনেক হিংসা হচ্ছে এই ভেবে যে আমাকে ছাড়া বাকি সবাই তোমাকে কেমন আপন করে নিছে।
কবিতা: আপনি শুধু আমাকে এই ভালবাসা টুকু পাওয়ার সুযোগ দিয়েন তাহলেই হবে। আর আপনি পাশে থেকে আমাকে একটু সাহস দিয়েন। আমি বাকি সব মেনেজ করে নিব।
মেয়েটির কথা শুনে নিজের প্রতি একটু সস্তি আসল।
আপনি যান ফেস হয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পরে আমাদের বাড়ি যেতে হবে।
তুমি যাও আমি একটু বাজারে যাব। বাজার থেকে এসে ফেস হব।
এখন আবার বাজারে যাবেন কেন?
একটা চা খেয়ে এসে পরে ফেস হব।
এখন আর বাজারে যেতে হবে না। আমি চা করে দিচ্ছি।
তুমি চা বানাতে পার।
হুম
আপনি একটু বসেন আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি।
বলেই বাহিরে চলে গেল। আমি বসে বসে সুলতানাকে নিয়ে ভাবছি। আর মোবাইল এ সুলতানার ছবি বের করে অপলক দৃষ্টিতে সুলতানাকে দেখছি।
হঠাৎ করে সানজিদা এসে বলছে মামা মামিটা কেমন হয়েছে।
সানজিদার কথা শুনে মোবাইলটা তাড়াতাড়ি করে বালিশের নিচে রেখে সানজিদার কথায় সাড়া দিয়ে বললাম হুম ভাল হয়েছে।
সানজিদা : হুম বুঝতে হবে না,দাদুিট কার?
দাদুর পছন্দ আছে বলতে হবে।
দুজনার কথা বলার মাঝে কবিতা চা নিয়ে আসল।
কি ব্যাপার আমাকে নিয়ে মা-ছেলের মাঝে কি কথা হচ্ছে হুম।
না তেমন কিছু না মামি। তুমি খুব কিউট মামি। তাই শুনলাম মামার কাছ থেকে।
এই নেন চা খান।
চা এর কাপ হাতে নিয়ে কবিতার দিকে তাকিয়ে আছি। কবিতাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে সানজিদা  পাশ থেকে বলে ওঠল মামা হইছে হইছে আর দেখতে হবে না। এত দেখলে চা ঠান্ডা হয়ে যাবে।
সানজিদার  কথা শুনে চা এ মুখ লাগালাম। চা মুখে নিয়ে তো রিতি মত অভাক হলাম। যেমন সুন্দর চেহারা তেমন সুন্দর তার হাসি, তেমন তার হাতের চা। চা খেয়ে মনে তৃপ্তি পেলাম। চা খেতে কবিতার ফ্যামেলি সম্পর্কে কথা হল। চা খাওয়া শেষ হলে কাপটা কবিতার হাতে ধরিয়ে দিলাম। কাপ হাতে নিয়ে কবিতা দাড়িয়ে আছে।
কিছু বলবে কি?
না! যাও তাহলে আম্মুকে সময় দাও।
চা টা অনেক ভালো হয়েছে।
ধন্যবাদ
যান এখন ফেস হয়ে রেডি হয়ে নেন। আমাদের বাড়ি থেকে ওরা রওনা দিয়ে দিছে।
ওকে যাচ্ছি।
গোসল দিয়ে এসে রেডি হতে না হতেই মেহমান চলে আসছে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসে মেহমানদের সাথে কোসল বিনিময় করলাম। কোসল বিনিময় শেষে তাদের চলে গেলাম খাবার টেবিলে।খাবার শেষ করে রুমে চলে আসলাম।বয়স্করা বাহিরে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কবিতার দুই জনন বান্ধবী আর চাচাতো দুই বোন আসছে। তাদের দেখে কবিতা তার আনন্দ ফিরে পেয়েছে। ভুলে গেছে কাল থেকে এপর্যন্ত যা হয়েছে। পাশের রুমে গিয়ে রেডি হচ্ছে তাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য। আর তার দুই বান্ধবী আমার সাথে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের সাথে আড্ডা দিয়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও ভালো লাগছিল। তৎক্ষণে মনে পড়ে গেল মমিতার কথা।তাদের বুঝতে না দিয়ে আড্ডা চালিয়ে যাচ্ছি। আড্ডা দেওয়ার মাঝে কবিতার বোন এসে বলছে ভাইয়া চলেন!
কোথায় যাব?
কোথায় আবার আমাদের বাড়ি।
ও তাই বল।
তাদের সাথে চলে গেলাম কবিতাদের বাড়ি। আমাদের বাড়ি থেকে কবিতাদের বাড়ি প্রায় ৫০ কি.মি.দুরে।তাদের বাড়ি পৌছাতে পৌছাতে রাত হয়ে গেছে অনেক। প্রায় ১১ টা বাজে। রাতের খাবার শেষে শুয়ে পড়লাম। কবিতা ঘাটের কোণায় বসে আছে চুপ করে। আর আমি শুয়ে শুয়ে সুলতানার কথা ভাবছি। কিছুকক্ষণ পর কবিতা বলছে একটা কথা বলব।
হুম বল
আমাদের আপনাদের বাড়ির মত এত রুম নেই। আর রুমের মেঝেতেও জায়গা কম।
তো কি হয়েছে?
আমার খুব খারাপ লাগছে। কাল রাতে একটুও ঘুম আসি নাই। এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। যদি আপনার কোন সমস্যা না হয় তাহলে আমি কি আপনার পাশে শুইয়ে ঘুমাতে পারি।
ওর কথা শুনে একটু খারাপ লাগল।
কি বলব ভেবে পাচ্ছি না?
শুধু তার দিকে তাকিয়ে আছি।
সমস্যা থাকলে থাক। আমি ঘাটের কোনায় বসে ঘুমিয়ে যাব।
আরো অবাক হলাম কথাটা শুনে। মেয়েটি আমাকে বিয়ে কতটা অসহায় হয়ে গেছে। তার শুয়ার জায়গাটা ও আজ আমি দখল করে আছি। নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। তাই বাধ্য হয়েই বললাম আচ্ছা শুইয়ে পড়।আমার কোন সমস্যা নাই।
ধন্যবাদ
বলেই শুয়ে গেল।
আচ্ছা আমি যে আপনার পাশে শুইছি সুলতানা  শুনলে কষ্ট পাবে না।
পেলে পাক আমি তো দুখের সাগরে ভাসছি।সে সুখে থাকবে কেন?
একটু কষ্ট অনুভব করুক।
জানেন আমার খুব স্বপ্ন ছিল জীবনে যার সাথে বিয়ে হবে,তার সব দুঃখ কষ্ট নিজের করে নিব। আর সুখটুকু দুজনে মিলে উপভোগ করব।
সুখটুকু দুইজনে মিলে উপভোগ করব। স্বামীর সেবা করে নারী জীবন ধন্য করব।
দেখছেন আমার ভাগ্যটা কেমন?
ভাগ্য গুনে আপনার মত স্বামী পেয়েছি। কিন্তু আপনার দুঃখ নিজের করে নিতে পাচ্ছি না। আর আপনার সেবা তো দুরের কথা। আপনাকে একটা অনুরোধ করব রাখবেন প্লিজ।
কি বল শুনি।
আমি আপনাদের বাড়িতে গিয়ে আম্মু আব্বুর যে ভালবাসা পাইছি তা কোনদিন ভুলতে পারব না। আপনি প্লিজ আমাকে এই ভালবাসা থেকে বঞ্চিত কইরেন না। দরকার হলে আমি আপনাদের বাড়িতে জি এর কাজ করব। আপনাদের খাওয়ার পর যা অবশিষ্ট্য থাকবে তাই খেয়ে দিন পার করে দিব। আমি কোন দিন আপনার কাছে স্ত্রী এর অধিকার চাবো না। প্লিজ আমাকে এই সুযোগ টুকু দিবেন।
কবিতার।
 কথা গুলো শুনে নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি কেমন করে একটা নিষ্পাপ জীবন নষ্ট করে দিচ্ছি। আমি কত টা বিভেকহীন হয়ে গেছি।
আবার ভাবছি আমার এখানে কি বা করার আছে?
আমার মন থেকে যে সুলতানার নাম মুছতে পারছি না। আমার শরীরের প্রত্যেকটি রক্ত কণিকায় সুলতানার নাম লেখা।
এই মনটা যে সুলতানার জন্য বেকুল হয়ে আছে।
কবিতা রুপে গুনে মমিতার থেকে রূপসী হলে কি হবে?
তার দিকে যে আমার বিন্দু পরিমান আকর্ষণ নেই। দুইদিন ধরে খুব চেষ্টা করছি অতীত ভুলে গিয়ে বাস্তবতায় ফিরে আসতে। কিন্তু কোনভাবেই মমিতার স্থানে কবিতা বসাইতে পাচ্ছি না। আমি এখন কবিতা কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। শুধু বললাম তুমি এখন ঘুম আস তো। কপালে যা আছে তাই হবে। বলে আমি কবিতার বিপরীত দিক কাত হয়ে ঘুম আসার ভান করে সুলতানাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছি কিছু বলতে পারি না। সকালে কবিতার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আমার। শুইয়ে থেকেই মোবাইলে হাত দিয়ে দেখি ৮.৩০ বাজে।
উঠুন ফ্রেস হয়ে এসে নাস্তা করুন। অনেক বেলা হইছে। এখন আর ঘুম আসতে হবে না।
কবিতার কথা শুনে ফ্রেস হয়ে এসে সকালের নাস্তা করলাম। নাস্তা করে আবার রুমে এসে ঘাটের উপর শুয়ে আছি। এমন সময় কবিতার বান্ধবী তানহা এসে বলছে দুলাভাই চলেন বাহিরে যাই।
না গেলে হয় না
ডং কইরেন না তো চলেন।
আমি কি সার্কাস এর পুতুল নাকি ডং করব?
আপনি বাহিরে আসবেন নাকি পানি ঢেলে দিব?
ওকে আসছি।
বাহিরে এসে দেখি কবিতার আরও কয়েকজন বান্ধবী এবং চাচাতো, মামাতো বোনেরা অপেক্ষা করছে আমার সাথে দেওয়ার জন্য। তাদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেছে। কবিতা এসে সবাইকে ডেকে নিয়ে গেল খাওয়ার জন্য। খাবার খেয়ে রুম এ গিয়ে বসে আছি। এমন সময় কবিতার একমাত্র ছোট ভাই এসে পাশে বসল।
ভাই আপনি কি আপু কে নিয়ে এখনি চলে যাবেন?
হুম তোমার আপু রেডি হলেই রওনা দিব।
ভাই আপনাকে একটা কথা বলি

হুম বল
আমরা দুই ভাই-বোন সব সময় এক সাথে থাকতাম। জানেন আপু খুব লক্ষী একটা মেয়ে। কোন সময় কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে নাই। ও নিজে কষ্ট পেয়েও অন্যকে আনন্দ দিতে চায়। কোন সময় কোন কিছু আবদার করে না। আপনার কাছে একটা রিকুয়েস্ট আপনি আপুকে কষ্ট দিয়েন না।
এমন সময় কবিতা এসে হাজির।
কিরে আমার নামে কি বদনাম করা হচ্ছে?
তুই যে আমাকে বোকা বানিয়ে দেস নাই তাই ভাই এর কাছে বিচার দিছি। দেখিস তোরে কি মাইর দেয়। বলেই দৌড় দিয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে গেল।
কবিতা: আপনার কি বাড়ি যেতে হবে না?
হুম তুমি রেডি হয়ে নাও।
আমি রেডি। চলেন বের হওয়া যাক।
পরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।
বাড়িতে আসার পর থেকেই মমিতাকে এক নজর দেখার জন্য খুব ইচ্ছে হচ্ছে। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। প্রায় প্রায়ই সুলতানাদের বাড়ির দিকে যেতাম কিন্তু তার দেখা পাইনি। একবুক কষ্ট নিয়েই বিয়ের ১০ দিন পর থেকে আবার আমার কাজে যোগ দেই। রাত ১ টা-২টার দিকে বাড়ি আসি। প্রত্যেকদিন বাড়িতে এসে দেখি কবিতা খাবার রেডি করে নিয়ে বসে আছে। কত দিন না করছি আমার জন্য খাবার নিয়ে বসে থাকতে হবে না, তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যেও। আমি এসে খেয়ে নিব। কিন্তু মেয়েটি আমার কথা শুনেই না। রোজ রোজ একই কাজ করে। খাবার শেষে দুইজনই ঘুমাই যাই। দুজনে এক ঘাটে থাকলেও মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে ভারত-পাকিস্তান এর সীমানা তৈরি করা হয়। এভাবেই চলে গেল ৬ মাস। আম্মু একদিন আমাদের শুইয়ে থাকতে দেখে ফেলে। তার পর থেকেই আম্মু আমার কাছে বিভিন্ন কিছু জানতে চায়। কবিতাকে আমার পছন্দ হয়েছে কি না। আমাদের মাঝে ঝগড়া চলছে কি না ইত্যাদি। আমি আম্মু কে নয় ছয় বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাই। হঠাৎ আমার প্রচন্ড জ্বর হয়।
_____
 আম্মু আমাকে ডাঃ এর কাছে নিয়ে যায়।
ডাঃ আমাকে বেশ কিছু টেষ্ট করতে বলে। টেষ্ট গুলোর করানোর পর ডাঃ রিপোর্ট দেখে বলে আপনি অনেক দেরি করে ফেলছেন।
আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
উনি আর ২মাসের বেশি বাচবে না।
উনি যা যা খেতে চায় বাসায় নিয়ে গিয়ে খাওয়ান সাথে এই ঔষুধ খাওয়ান আল্লাহ্ চাইলে সুস্থও হতে পারেন।এর বাহিরে এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই। আমি কথা গুলো শুনে খুশিই হয়েছিলাম। কেন না সুলতানার  ভালবাসা বুকে আগলে রেখেই মরতে পারব জেনে। আমার সকল আত্মীয় স্বজনরা এসে দেখে যাচ্ছে আর আমার জন্য আফসোস করছে। এদিকে কবিতা নাছর বান্দা। রিতি মত রাত-দিন আমার খেজমত করে যাচ্ছে। আমি বার বার বুঝিয়েছি তুমি চলে যাও ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নিজের জীবনকে সুন্দর করে সাজাও।
কবিতা শুধু আমাকে বলত বাঙ্গালী মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়। আমি আপনার ঘরে বউ সেজে এসেছি লাশ হয়ে বের হব। আপনি আমাকে সহ্য করতে না পারলে, আমাকে মেরে ফেলেন, আমি লিখে দিয়ে যাব আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। না তারপরও এ কথা বইলেন না।
কথা গুলো শুনে মন ভরে যেত। কিন্তু কষ্ট একটাই মেয়েটির জন্য কিছুই করতে পারলাম না। কবিতা নামাজ ও কোরআন পড়ে মুনাজাতে বসে অঝোর কান্না করত আর আমার জীবন ভিক্ষা চাইতো আল্লাহর কাছে।যত দিন যাচ্ছে ততো
আমি সুলতানাকে শেষবার দেখার জন্য পাগল হয়ে যাই।
সুলতানাকে দেখা করার জন্য বার বার বলা হইছে। কিন্তু সে আসে নাই। আমি ওর সাথে ফোনে কথা বলি।
সুলতানা  আমি তোমাকে একনজর দেখতে চাই।  শুনেছো তো মৃত্য আমাকে ক্রাশ করে নিয়েছে।
সুলতানা : তুমি কে?
আমি তোমাকে চিনি না।
তুমি মরে গেলে আমার কি?
আমি দেখা করতে পারব না।
সরি!
এভাবে ১০ দিন চলে গেল। আমার জ্বর কমে গেল। আমি সুস্থ হতে শুরু করি। এদিকে সুলতানা অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে সংসার শুরু করে।

তোমাকে ভালোবেসে এই জীবনে তোমাকে আর পাওয়া হল না। তবুও বলি তুমি সুখী হও। তোমার আপন নীড়ে। স্বপ্নগুলো সাজাও তোমার মনের মত করে।  কোনদিন ভালবাসার অধিকার নিয়ে আসবো না তোমার কাছে। আমাকে নিয়ে তুমি ভেব না। মন থেকে আমাকে খোঁজ  করলে তোমার কাছে চলে আসবো।
সব দোষ তো আমার,  এখানে কবিতার কি করার আছে।  তাই কবিতার সাথে আর অবিচার করলান না।
তাকে তো আমার বাবা মা পছন্দ করে ইসলামি সরিয়ত মতাবে নিয়ে এসেছে। আমিও কবুল করেছি আল্লাহর কলেমা পড়ে।

তাই, কষ্ট হলেও,               
আমি কবিতাকে স্বামীর অধিকার দেই। সুলতানার বিয়ের খবর শোনার পর আব্বুর কাছ থেকে শুনতে পাই, আম্মু জেনে গেছিলো কবিতা আর আমার দুরসম্পর্কের কথা।
তাই আম্মু ডাঃ কে দিয়ে এমন মিথ্যা রোগের কথা বলিয়ে ছিল।
যাতে করে আমি আমার ভুল বুঝতে পারি।
সুলতানার বিয়ের পর থেকে আমি কবিতাকে ভালবাসতে শুরু করি। এখন কবিতা আর আবির এর মাঝে ভালবাসার অভাব নেই।

বি.দ্র. গল্পটি কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক কোনভাবে দায়ী নয়।লেখক তার আপন ভাবনা থেকে লিখেছেন?গল্পে যে নাম গুলো ব্যবহার করা হয়েছে তা লেখকের কল্পনা থেকে নেওয়া।গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।

গল্পটি কেমন লাগলো? দয়া করে জানাবেন।লিখার মাঝে কোন ভুল হলে আপনাদের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আপনার মন্তব্য আমাকে আরো গল্প লেখার জন্য উৎসাহ প্রদান করবে।

Saturday, September 21, 2019

বিরহী মন

       বিরহী মন

এম এ মাসুদ রানা


আষাঢ় ও শ্রাবনের মধ্য রাত,
তুমুল বৃষ্টি করেছে যে, কাত,
মনের মাঝে জাগে প্রনয়ের স্বাদ।
উষ্ণতা খুঁজে হৃদয়ের আকুলতা
বুক জুড়ে একাকীত্বের হাহাকার।

নেই কোথাও আলো নিশানা
আঁধারে ঢেকেছে ঘোটা পল্লী।
জানালার পাশে শুধু  তুই নেই
বিষন্নতা লাগে বিরহী হৃদয়ে।
ব্যকূলতায় আছি আলো ছাড়ায়
দু"চোখে নেই কোন নিদ্রা।

পথিকেরা ভুলে গেছে পথ
হারিয়ে ঠিকানা হয়েছে নিঃস্ব।
বিরহী দু’চোখে, হয়েছে
একাগ্র বর্ষার জলে সিক্ত।

নেশায় যুবক

➡➡➡➡  নেশায় যুবক   ➡➡➡➡
⬅⬅⬅   এম এ মাসুদ রানা   ⬅⬅⬅

বেকার যুবক যারা হয়ে দিশাহারা
ধুমপান বিষপান মানে না তো ওরা।

পথে ঘাটে ঘুরে ওরা খায় হিরোইন
গাজা, ভাঙ্গ খেয়ে ওরা মাতলামি করে।

চোখ দু'টো গাঢ় লাল নেশায় বিলিন
পথে-ঘাটে ঘুরে তারা করে পাগলামি।

মন ভাঙ্গা যুবকের বল নাই কিঞ্চিত
মদ, বাবা,ডাইল খেয়ে ঢলে নিশ্চিত।

আর কত এই দেশে নেশা করবে বিস্তার
ঘুঘখোর, চাঁদাবাজ পেয়ে যাবে নিস্তার।

নাইট ক্লাব ক্যাসিনো খুলে দেয় সরকার
এর ফলে যুব সমাজ হয়েছে  ছাড়খার।

বেকার জীবনখানি করতেছে ছাড়খার
নেশা নিয়ে করতেছে রাত-দিন পারাপার।

আসবে না"কি তাদের যৌবনের বাণ
সংসার জীবনে পাবে না'কি তারা পরিত্রাণ।

Saturday, September 14, 2019

নিরাশার আশা

  নিরাশার আশা 

   এম এ মাসুদ রানা


শরতের জ্যোৎস্না ভেজা হাসী
তারা জ্বলা প্রদীপের নিশি।
গানে ছন্দে ভেসে যাওয়া
তোমার কথার প্রতিটি ফুলকলি।

হারিয়ে ফেলেছি সব কবিমনা ভাব
এঁকেছিলাম মনের ভীতরে যে, ছাপ।
জীবন কাহিনীর পাতা, রয়েছে শুধু ফাঁকা,
ভরে গেছে নিশ্চুপ কারুকাজের খাতা।

শূন্য আকাশে ছড়িয়েছে যে, বিশালতায়
সুখ নেই তাতে বর্নহীন ধূষরে মেঘমালা
পুরনো স্মৃতিগুলো মনে দেয় শুধু জ্বালা।
হারিয়ে ফেলেছি জীবনের প্রাপ্তির বাসনা
প্রতিক্ষার ক্ষণে ক্ষণে জাগে না কোন কামনা।

Friday, September 13, 2019

দূষিত আকাশ

 দূষিত আকাশ

 এম এ  মাসুদ রানা


তরা বাংলার আকাশ দেখ
উড়ছে দেখো কালো মেঘ
উন্নয়নের জোয়াড়ে ভাসে!
কথা থেকে দূর্নীতিতে আসে
কথায় কথায় কারা কাঁদে
এরই ফলে মেধা ফাঁসে ।

কালো মেঘের ঘনঘটায়
চারিদিকে বইছে হাওয়া
হচ্ছে কি আর মেধার খাওয়া।
কখনো কি কভু মুক্ত হবে?
এই বাংলার আকাশ বাতাস
মেধার গলায় যে, পরেছে ফাঁস
সবাই বলে সাবাস সাবাস।

হলো নিকষ কালো রঙে 
দুর্নীতিতে বাংলার আকাশ।
সবাই মিলে ঐক্য হবো,
দুর করতে নিকষ কালো
জ্বালাতে হবে মেধার আলো
উন্নয়ন সবে রাস্তায় ফেল।

Thursday, September 12, 2019

চাই না বিভেদ

 চাই না বিভেদ

 এম এ  মাসুদ  রানা


আলিয়াও না, ক‌ওমিয়াও না,
হানাফিও না, আহালেও না,
মালিকিও না, শাফিয়িও না,
হানবালিও না, হানিফিও না,
চাই না বিভেদ মুসলিমে।
চাই না ভেদাভেদ মোরা
কুরআন-সুন্নাহ ও হাদিসে।

শ্রেষ্ঠ নবীর পথটা ধরি
তাঁর কথায় মোনাজাত করি।
আখিরাতের পথ সুগম করি
এই বাসনায় ইমান ডোরী
যেন না হয় জাহান্নামের খড়ি।

নাজাত পেতে চান গুনাহ ছাড়ুন
আর ছেড়ে দিন শিরক, বদী।
পদ পদবীর লোভটা ছাড়ুন
নবীর ডাকে এগিয়ে আসুন
জান্নাত পেতে ইবাদত করুন।

Tuesday, September 10, 2019

দম

________  দম  _______
__ এম এ মাসুদ রানা __ 


দেহের খবর বলি শোন।
উত্তর দিকে আছে বেশী
দক্ষিণেতে আছে কম।
দেহের খবর না জানিলে
মৈত্রতত্ত্ব কিসে মেলে
অরুণ ভীতু সিয়া সীস-শ্রেত
দশদিকে এই চারি কোণ।
আগে খুঁজে ধর তারে
নাসিকাতে চলে ফেরে
নাভি পদ্মের মূল দূয়ারে
উঠে বসে সর্বক্ষণ।
সারা জাহানের মানুষ
যে জানে সে হয় বেহুস
মাসুদ বলে, থাক রে বেহুস
আদ্য জাহান তার আসন।



Sunday, September 8, 2019

বিনোদন

  ________ বিনোদন  ________

___ এম এ মাসুদ রানা ____


নেচে-গেয়ে চল তুমি

আগুনে কর পূজা!

মাঝেমাঝে কর নত শির

আবার রাখোও রোজা!


নাচ-গান চললে হয়

শয়তান বেজায় খুশি!

মুমিনর গায় না গান 

বজায় রাখে তাদের মান।

এপথে হয়ও না বেহুঁশ

পাপ পুণ্যে থাকে যেন হুশ।


নাচ-গান শোনে করো

ঈমানের  বিনাশ!

মুসলিম হয়েও তমি

মালউনদের হয়েছো দাস!


হক্ব কথা বলতে মনে আসে ভয়

সময়ে সময়ে থাকে  সংশয়!

হক কথা প্রচারে থাকে যত ভয়।

বিবেক আর তো বিবেক নয়

দিনে দিনে হচ্ছে বিবেকের ক্ষয়

করবে নাকি তোরা ইমানের জয়।


Wednesday, September 4, 2019

শহীদ

          শহীদ

   এম এ মাসুদ রানা 


শহীদের কাফেলায়
আজ প্রতি ওক্তে মুসলিম।!
কাশ্মীরি যোগ দেয়
রক্তের লেলিহান শিখায়!

রক্তের লালে রঞ্জিত
আজ পৃথিবীর জান্নাত!
একতার জল দিয়ে
ধুতে কেন চায় না মোরা?

কাশ্মীর কি নিবে কেড়ে?
তোদের কোনকিছু!
মূল কারণ ওটাতো না!
যত ক্ষোভ বিদ্বেষ হোক
মোদের তেলাওয়াত প্রার্থনায়!

আর কত লাশ নিবে?
আর কত রক্ত দিবে?
মোর কাশ্মীরের ভাই।
এজাজত নেতারা!
একটুও ভাবো না কি তোরা?
কত অসহায় হয়েছে তারা,
তোদের বিবেকের দরবারে
দেয়নি এখনো কোন সাড়া।

Tuesday, September 3, 2019

দালাল

           দালাল 

       এম এ মাসুদ রানা 


আজ জীর্ণশীর্ণ মুসলিম বিশ্ব
ছিন্নভিন্ন করেছে আরববিশ্ব,
সর্বক্ষেত্রে ঠোকাচ্ছে দিবানিশি
মুসলিম বিশ্ব হয়েছে একাকী।
ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব মানবতা
নিপীড়িত হচ্ছে মুসলিম উম্মাহ
লাঞ্চিত হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব
রক্তাক্ত করেছে মুসলিম জাহান।

আজ ইহুদীরা মেতে উঠছে
রক্তের হলি খেলায়,
মুসলিম নিধনে মাতাল হয়েছে।
আজ আরব বিশ্বও এক হয়েছে
মুসলিম নিধন সাধনে
কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে করছে কাজ।

আফগান ধ্বংস হলো
মুসলিমের সুরের সাধনে।
ইরাক ধ্বংসের কারনে
নাই কি মুসলিমের হাত।
দীর্ঘদিন রক্তে খেলা খেলছে
ফিলিস্তিনের মুসলিম।
আজ কাশ্মিরেতে মালাউনরা
করছে মায়ের বুক খালি।
আজ আরব বিশ্ব তবুও 
করছে মালাউনের দালালি।

Monday, September 2, 2019

বসন্ত

         বসন্ত 

এম এ মাসুদ রানা 


আসে শীত, যায় শীত
মিটে সব মনের জিদ।
অপ্রত্যাশিত  ইচ্ছেগুলো
ব্যবধানে রয়ে গেলো।

পিঠাপুলির উৎসব হলো
পায়েস পোলাও, খেজুর রস
ভাপা পিঠা আর দুধ ভাত
খেয়েদেয়ে করি কাজ।

ভোরবেলা রোদের আশায়
ছুটে চলি যেথায় সেথায়,
উঠবে কবে দীপ্ত প্রভা ,
সবাই করে তার অপেক্ষা ।

কেমন করে কেটে গেল
ঘোটা দুই দুইটি মাস।
লেখাপড়া হয়নি তেমন
সেই যাতনা জ্বালায় এমন
রুদ্ধ করে শ্বাস-প্রশ্বাস ।

আসল আবার নয়া কাল
প্রকৃতিকে করেছে লাল।
সেই আমেজে ছুটে চলি
পথ-ঘাট আর অলি-গলি।

পাখিরা সব পেল পরিত্রাণ,
ঠান্ডা ভুলে ধরল সুরের গান।
এলো বসন্ত , এলো বসন্ত বলে
শীত গেলো সবে মাত্র চলে।
ফুলের আলোতে সুসজ্জিত গগণ
আকাশ বাতাস মুখরিত এখন।
এ যেন উঠে আসা নতুন প্রাণ
জরাজীর্ণ শীত থেকে অবসান।

এই ফুল , সেই ফুল
গন্ধরাজ গাদা জবা শিমুল
জাম্বুরা নয়নমণি বেলি বকুল
 হাসনাহেনা গোলাপ পানিকচুরি
সজনে ডালিয়া আতা বরই সূর্যমুখি
চন্দ্রমল্লিকা আর শত ফুল ও ফল।
সে সব কারনে, পাখির ধরে গান
প্রস্ফুটিত সৌন্দর্যের বাড়াল মান।

আমি বলি স্বাগতম !
স্বাগতম হে বসন্ত ,
তোমার রূপ অফুরন্ত
শীতকে করেছ ক্ষান্ত।