Tuesday, November 17, 2020

তুমি

  তুমি  

এম এ  মাসুদ রানা 


তুমি হতাশার মাঝে আশা

তুমি নিরাশার মাঝে ভালোবাসা।

তুমি আবেগ ভরা মনের মাঝে বিবেক

তুমি অভিমানের মাঝে নিরভিমান।

তুমি শিশির মাঝে মিষ্টি সকাল

তুমি ক্লান্ত দুপুরের মাঝে প্রশান্তি।

তুমি গ্রীষ্মের রোদ্দুরের মাঝে শীতল হাওয়া

তুমি বর্ষার কর্দমাক্তর মাঝে বসন্তের ফুল।

তুমি ছেলেবেলার ক্রোধের মাঝে প্রবল উচ্ছাস 

তুমি ছোটবেলার দুষ্টুমির মাঝে শিষ্ট। 

তুমি মরুভূমির মধ্যে একমুঠো ঘাস 

তুমি মরীচিকার মাঝে পানির সন্ধান। 

তুমি কুৎসিত এর মাঝে পরম সুন্দরী

তুমি হৃদয়ের গহীনে অনুপমা, অনন্য, অনবদ্য।

Thursday, November 12, 2020

হতাশীর প্রত্যাশা

  হতাশীর প্রত্যাশা

এম এ মাসুদ রানা 


আমি নিরর্থক, আমি নয় কোন খানে স্বার্থক,

কথায়-কথায় সময়ে, অসময়ে করি চিৎকার 

চারিদিকে শব্দ শুনি শুধুই শুনি হাহাকার 

কারো করো কটু কথায় হৃদয় হয় ছাড়খাড়।


আমারে ধরতে করতে না কোন কৌশলের দরকার

আমি হয়ে গেয়েছি যে, তোমার সমাজে নিরাকার। 

আমায় খুঁজতে  দিতে দিতে হয় না কোন খানে হানা

আমায় ডাকলেই পাওয়া যাবে এটও তোমার জানা।


আমার সাথে  করো তুমি অনেক ছলাকলা 

বলতে চাই অনেক কিছু, হয় না কখনো বলা

মনকে বলি তোমাকে তো করবেই সবাই হেলা

তোমার জীবন নদীতে যে, ভাসে দূখের ভেলা।


আমায় করেছো হেলা, কাঁটছো আসময়ের বেলা 

তুমি তৈরী করেছো তোমার ভুবনে আনন্দের মেলা

তোমার মনানন্দের তরে আমার সাথে তোমার খেলা

আমায় দিয়ে তোমার ক্লান্ত মনকে শান্ত করে নিলা।


ভেবো না তুমি, আমি কিছুই বঝিনা

তোমার মনে লুকানো কথা সবাই জানি।

চেষ্টায় আছি, আমি আমাকেও যেন পাল্টে পরি

তোমার মতোই হতে পারি যেন অতি তারাতাড়ি

সেই তরে তোমার সাথে করি না কখনো বাড়াবাড়ি।


রচনাকাল ১১/১১/২০২০

চরম প্রতিবাদ

 চরম প্রতিবাদ 

এম এ মাসুদ রানা 


স্রষ্টা যাঁর প্রতি হয়েছে খুশি

দান করেছে সম্মান

কারো কি ক্ষমতা আছে?

করবে তাঁকে অসম্মান! 


জ্ঞানের ভান্ডার তাঁর হাতে

ধরণীর বুকে শ্রেষ্ঠ

তাঁকে নিয়ে ব্যাঙ করো

কেন বোকারাম কেষ্ট?


তাদের প্রতি চরম ঘৃণা

বাঁজে উঠে শরীরটা

আমি বলি তাদের মাথায়

মার লাথি আর ঝাঁটা। 


তাঁকে নিয়ে কুৎসা রটাটে

হয় না যেন সাহস 

তাঁকে নিয়ে ব্যাঙ করা 

নয়তো এতো সহজ।


তাদের প্রতি আমার ধিক্কার 

জানায় চরম প্রতিবাদ 

তাঁকে নিয়ে ব্যাঙ করে কেউ 

পাবে নাতো মাফ। 


রচনাকালঃ ১১/১১/২০২০

Monday, November 9, 2020

প্রেম এসেছিল নীরবে

 প্রেম এসেছিল নীরবে

লাবিব আল সরকার, এই নাম সম্পর্কে ও তার জন্মসূত্র পিতামাতা তা সবার অজানা। কেন না কোনো এক ডাস্টবিনের পাশ্বে এক পাগলী এক নির্জন প্রান্তে শিশুটিকে কুড়িয়ে পেয়েছিল। শিশুটির শরীরে তেমন কোন প্রতীক ও কোন রকম পোষাক পরিহিত ছিলো না। 

বেশ কয়েকদিন শিশুটিকে সযত্নে রেখে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াত। যেখান সেখান থেকে ময়লা ও নোংরা খাবার খাওয়াতো শিশুটিকে।

এমন এক সকালে এক নিঃসন্তান ভদ্রমহিলা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়, পাগলীটার কোলে এই কোমলমতি শিশুটাকে দেখ, (এক অপরিচিত নোংরা বস্ত্র পরিহিতা মহিলার কোলে শিশুটিকে দেখে) দেখতে পেয়ে ভদ্র মহিলা এগিয়ে গেলেন। 

শিশুটিকে জড়িয়ে রেখেছে মহিলাটি। শিশুটিকে জরিয়ে রাখার করণে বয়স তেমন বোঝা না গেলেও পা দুটো দেখে মনে হয় ৩ থেকে ৪ মাসের বেশি বয়স হবে না। শিশুটির মা যে এই মহিলা নয় তা সহজে বোঝা যায়। মহিলাটির বয়স কম করে হলেও ষাটের বেশি হবে। তবুও শিশুটাকে বুকে আগলে রেখেছে অনেক যতনে। পাগলী হলেও শিশুটার প্রতি ছিলো তার অনেক ভালোবাসা, এটা বুঝতে ভদ্রমহিলাটার বাকি রইলো না। ভদ্রমহিলাটা ভাবলো শিশুটা এখানে এমন অবস্থায় থাকলে বাঁচতে পারবে না এটা নিশ্চিত। শিশুটাকে বাঁচাতে হবে যে কোন উপায়ে।


এই ভদ্রমহিলাটা ছিলো মরনব্যাধি রোগে আক্রান্ত, যে কোন মূহুর্তে চলে যেতে হতে পারে আত্মা দেহের বাহিরে। মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকে সবসময়, কখন আসে যমদূত তাকে দেখা করতে।


এই আগন্তুক মহিলা নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় শিশুটিকে উদ্ধার করে এক অনাথ আশ্রামে রেখে দেন। সেই মহিলাটি নিজের কাছে না রেখে। প্রায় খোঁজ খবর রাখতেন শিশুটির, যাবতীয় খরচও বহন করতেন, এভাবে তার দিন চলে যেত , শিশুটি পাঁচ বছরে পা দিয়েছে। সেই আগন্তুক মহিলাটি নিঃসন্তান হওয়া মাতৃসুলভ মন দিয়ে শিশুটির থাকার স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সারা জীবনের বিদায় নিলেন এই মায়াভরা  ধরণী তল হতে।


তারপর অনেক কথা, তার জীবনে অনেক বাধা পার হতে হয়েছে লাবিব আল সরকারকে । স্কুল জীবনে অনেক সমালোচনা কটুকথা ও ব্যঙ্গর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু ওকে থামিয়ে রাখা যায়নি কেবল তার মেধা ও কর্মকুশলতার কারণে। তিনি ছিলেন অনন্য মেধার অধিকারী, সহপাঠী ছাড়াও আশ্রমের প্রায় সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকাটা তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সবার সাথে সবসময় হাসি খুশিতে থাকতো। সবাইকে মাতিয়ে রাখতো বিভিন্ন ছন্দ কথা দিয়ে।


আনন্দ ও মুক্ত স্বাধীনতায় সে অতিবাহিত করল ইই স্কুল ও কলেজ জীবন। হাই স্কুল ও কলেজ জীবনে ছিলো তার ব্যাপক সফলতা। অনেক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছিল সে। এগুলো প্রতিটি সফলতার পিছনে ছিলো তার কঠোর প্ররিশ্রম ও দূরদর্শিতা। 


তারপর কলেজের চৌকাঠ অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করল। সেখানে ও মাথা উঁচু করে পথচলা শুরু করলো। তবুও সে নিজেই কোন কোন মহূর্তে, যেন পরাজিত সৈনিকের মতো মনে হতো। কারণ কৈশোর জীবনে তার পরিচয়টা সে বুঝতে পারেনি, বয়ঃসন্ধি ও কালের পরিবর্তনের সাথে তাকে আঘাত করে। সময়ে অসময়ে খুঁড়ে খুঁড়ে জখম খায়। 

যখন সে একা থাকত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মানপত্র গুলিতে চোখ বুলিয়ে দেখে নিত। জীবনে চলার পথে কোনো না কোনো সময় বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়, তাই হয়েছিল লাবিব আল সরকার জীবনে। 


সেদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠান সূচীতে ছিল কবিতা, নৃত্য, সঙ্গীত আর ছিল এক বিশেষ আলোচনা সভা। 

আলোচনার বিষয় ছিল বর্তমান যুব সমাজের কাছে কাজী নজরুল ইসলাম কতটা জনপ্রিয় ? 

জীবনানন্দ দাশের "বনলতা সেন" কবিতার বিশেষ আলোচনা ও আবৃত্তি। 

আর সমস্ত অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিল লাবিব আল সরকার। রাত তখন প্রায় দশটা। বিচারক মণ্ডলী মূল মঞ্চের বিপরীত দিকে বসে আছেন। দর্শক সংখ্যা গত বছরের থেকে দ্বিগুণ বেড়েছে। মাঝে মাঝে দর্শক হাততালি দিচ্ছে মনানন্দে। ছোটরা বেলুন ও বিভিন্ন খেলনা নিয়ে খেলা করছে। কোথাও আবার আতসবাজি ফোটানোর আওয়াজ। প্যান্ডেলের মধ্যে কোথাও ফেরিওয়ালা খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ রাত্তির সম্মুখীন লাবিব আল সরকার।

হঠাৎ আলো নিভে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে কিসের চিৎকার, হৈ হুল্লা, হুড়োহুড়ি পড়ে গেল চারিদিকে। ঠিক সেই সময় কারা যেন এসে জাপটে ধরল লাবিব আল সরকারকে। টেনে নিয়ে গেল মঞ্চের বাইরে, গায়ে মারও পড়ল লাবিব আল সরকারের । তারপর কি হল আর কিছুই জানেনা লাবিব আল সরকার।

অচেন অবস্থায় পরে রইল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে।.........  একজন তাকে নিয়ে ভর্তি করেছে এক নার্সিংহোমে।


অচেতন অবস্থায় কেটেছে কয়েকদিন। যখন তার চেতনা ফিরল চোখ খুলে দেখল কোনো এক নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে আছে। পাশে বসে আছে চেনা মুখ অতিথি। অনুষ্ঠান সূচীতে তার নাম ছিল। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’কবিতা আবৃত্তি করবে। বাবা মাকে নিয়ে এসেছিল সেদিন। বাকি বিষয়টা লাবিবের অজানা।

অতিথির সঙ্গে ব্যাক্তিগত ভাবে আলাপ হয়নি কোনোদিন। লাবিব কিন্তু সেদিন দেখল খুব আপনজনের মতো পাশে বসে আছে। ছোট শিশুর মতো চোখে ভরে গিয়েছিল সেদিন। কথা ছিলনা দুজনের মুখে। অতিথি হাতের রুমাল দিয়ে চোখ মুছাতে গিয়ে নিজের চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। অতিথিকে কাছে পেয়ে লাবিবের স্বপ্ন দেখছিল। নানা প্রশ্ন জেগেছিল তার মনের মনের গোপনে । কে এই মেয়েটি, কেনই বা তার পাশে বসে আছে? চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার এক অনন্য সুন্দর রোমান্টিকতা অনুভবের অনুভূতি হচ্ছিল লাবিবের।

ঠিক তখনি অতিথি পরিস্কার ভাবে বলল

কেন এতো চিন্তা করো? 
কিসের এতো ভাবনা তোমার?

এইতো আমি আছি তোমার পাশাপাশি। 


মনটাকে স্থীর করার চেষ্টা করল লাবিব। 

কিন্তু তার আগে চোখ পড়ল অতিথির দিকে। পরনে হালকা রঙের গোলাপি শাড়ি, পাশে থাকা রজনীগন্ধার তোড়া, এলোমেলো কেশ ভাগে বকুল ফুলের মালা দিয়ে জড়ানো, কপালে আলতো করে বসানো ছোট গোলাপি টিপ, খোলা জানালা দিয়ে পড়ন্ত বিকেলের শেষ আলোর রেখা পড়েছে শাড়ির ভাঁজে। বড়ই সুন্দর লাগছিল অতিথিকে। 

অতিথি এমন ভাবে কাছে আসবে তা লাবিব বুঝে উঠতে পারেনি। 

আর পারেনি বলেই রোমান্টিকতা ছুঁয়ে যাচ্ছিল একে অপরকে।

অতিথি বলল –
‘সারাক্ষণ কার কথা ভাবছেন ? 

কেনই বা ভাবছো? 

এই ভাবনার দরকার কি আছে? 

আমি তো রয়েছি তোমার পাশে।


লাবিবের চোখে জল। ছড়িয়ে পড়া আঁচলের এক কোন দিয়ে লাবিবের চোখ মুছিয়ে দিয়ে অতিথি বলল। 
এমন করে ভেঙে পড়লে তোমার শরীর খারাপ হয়ে যাবে। 

যাক সে কথা ডাক্তারবাবু বলেছেন আজ তোমাকে ছুটি করে দেবে। 

তাই আমি আগেই চলে এসেছি। বাবা মা একটু পরে গাড়ি নিয়ে আসছে।

এদিকে সন্ধের বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে উঠল। সেই আলোতে অতিথিকে এক পলকে দেখে নিল লাবিব। এমন এক সময়ে যৌবনা যুবতীর সন্নিধ্যলাভ লাবিবের কাছে পরম আনন্দের বিষয় ছিল। 

এমন সময় নার্সিংহোমের সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। অতিথির মধ্যে বেশ খুশির ভাব। জানালা খুলে দেখে নিল বাবা ও ভাই গাড়ি থেকে নামছে। কিন্তু তখন অতিথির চোখে মুখে এক বিষণ্নতার ছাপ। 

সে বলল –
এই যে তোমার ছুটি, এবার কোথায় যাবেন বল,

তোমাকে পৌঁছে দেওয়া হবে সাবধানে থাকবেন কিন্তু’।
লাবিব ভাবল কোথায় যাবো, 

আশ্রম থেকে এসেছি কতদিন হয়ে গেল। লাবিব আর কিছু বলতে পারছিল না। এমন সময় অতিথির বাবা এসে ঢুকল। কিছু বলার আগেই লাবিবকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। লাবিবকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। গাড়ি চলতে আরম্ভ করল। পৌঁছালো অতিথির বাড়ি। লাবিব হয়ে উঠল পরিবারের একজন। অতিথির সংস্পর্শে বেশ ভালোই কাটছিল লাবিবের দিনগুলি।

সেদিন ছিল ফাগুনী পূর্ণিমা। চাঁদ উঠেছে আকাশে , অন্য দিনের মতো এ-রাত্রিটা বেশ মোহময় লাগছিল। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় কদম আর বড় অশ্বথের গাছ। ফুলে ভরে গেছে কদম গাছ। আর অশ্বথের ঝুড়ি গুলো মাটিতে নেমে এসেছে। ঘুম নেই লাবিবের। কাছে পেতে চায় অতিথিকে। 

এ এক নীরব ভালোবাসা টানছে

মনটা করে সবসম ছটপট, তাকে দেখার আশায়, দুটি কথা বলবো অতিথির সাথে। মাঝে মাঝে মনে অনেক ভয়ও আসে।

রাত কতটা হবে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। চোখে ঘুমও আসছে না। এমন সময় খুব হালকা কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। হালকা হলেও বোঝা যাচ্ছে কার গলা। অতিথির মা ও বাবা কথা বলছে অতিথির জন্ম পরিচয় নিয়ে। অতিথি মন দিয়ে শুনছিল, শুনছিল লাবিবও। চাঁদ যে কখন গড়িয়ে পড়ছে পশ্চিম আকাশে তা বুঝতেই পারেনি লাবিব। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, আর কেউ জেগে নেই। জেগে আছে শুধু লাবিব। কেবল ছোট একটি কাগজে লিখল 
আমাকে খুঁজো না অতিথি..........।

তেমার তরে আমার মনে প্রেম এসেছিল নিরবে।



লুকোনো স্মৃতি

লুকোনো স্মৃতি

৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রাত্রি তখন ঠিক ৯টা ছুঁই ছুঁই । হঠাৎই মোবাইল ফোনের আওয়াজ। বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অন্যমনস্কতাকে সরিয়ে ফোনের দিকে মনোনিবেষ করল। তৎক্ষণাৎ দৌড়ে এসে ফোনটি হাতে তুলে নিল। দেখল অচেনা এক নম্বর। ফোন ধরবে কি ধরবে না এই নিয়ে নিজের মনের ভিতর মতবিরোধ দেখা দিচ্ছিল। কেননা কয়েক দিন আগে এক অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। ফোন ধরা মাত্রই নিজের ফোনের সমস্ত নথি চুরি হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে সাইবার ক্রাইম যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই কথা ভাবতে ভাবতে ফোন কেটে গেল। আবার কিছুক্ষণ পর আবার সেই নম্বর থেকে ফোন বাজল। এই নম্বর হয়ত পরিবারের কারুর চেনা , এইসব কথা ভাবার পরও তার ফোন ধরার প্রতি অনিহা দেখা গেল। সে নিরুপায় হয়ে ফোন ধরল। ফোনটি ধরার সঙ্গে সঙ্গে এক মহিলার কন্ঠস্বর ভেসে এলো

ভালো আছিস নিলু।

কন্ঠস্বর চেনা চেনা মনে হলেও সেই মুহূর্তে বুঝতে পারেনি। কার গলা , কে আবার আমাকে এরকম আমাকে সম্বোধন করে। কিছুক্ষণ স্তম্বিত হয়ে থাকার পর কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠল –

কে তুই ; 

আমি তো বুঝতে পারছি না , 

দয়া করে বলবি আমায় কে তুই ‘।

এই কথা বলার পর অধির আগ্রহে কান পেতে শুনতে লাগল উত্তর পাওয়ার জন্য।

ফোনের ওপারে মহিলা কন্ঠস্বরটি নিলুর এইরকম প্রত্যুক্তি শুনে নিজেকে সরিয়ে নিল। 

সে আশা করেনি নিলুর কাছ থেকে এরকম কথা গুলো শুনতে পাবে বলে। 

মহিলাটি ভেবেছিল অনেকদিন পর কথা হচ্ছে ,নিলু নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে কথা বলবে। 

কেননা বহু দিনের বন্ধুত্ব।

মাঝখানের কয়েক দিনের আমার আচরনে এখনও রেগে রয়েছে নিলু।

এই কথা ভেবে ফোন কেটে দিল। 

নিলু কিন্তু বুঝতে পারেনি যে ফোন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তৎক্ষণাৎ নিলু ও ফোন ব্যাক করলো। কিন্তু কোন লাভ হলো না।

তার কারণ মহিলাটির ফোন বন্ধ। 

তখন থেকে নিলু আরও অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। 

কেন জানিনা নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছে না । 

সে অধীর আগ্রহে ব্যকুল চিত্তে মুখিয়ে ছিল কখন সে ওই মহিলাটির গলা শুনতে পাবে , ও তার নাম জানবে।

এই কথা ভাবতে ভাবতে রাত কেটে গেল , পরের দিন সকালে নিলু আর একবার চেষ্টা করল যাতে ফোন ধরানো যায়। কিন্তু সেই একই কথা। ফোন রেখে দিয়ে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু জানতো সে একদিন না একদিন আবার ফোন করবে। কারণ নিলু বুঝেছিল কোনোদিন তার সঙ্গে আমার নিশ্চয়ই পরিচয় ছিল । নিলু জানতো একবার যখন কথা হয়েছে আবার কথা হবে কোনো না কোনোদিন। নিলু সেই প্রতীক্ষায় রইল । প্রতীক্ষা মতো সেইদিন আবার সন্ধ্যায় আবার ফোন এলো। নিলু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল পরিচয় আগে নেবে।

-‘কে তুমি ? 

পরিচয় না দিলে আমি কথা বলবো না’।

অপর দিকে মহিলাটি পরিচয় না দিয়ে থাকতে পারলো না। 

সে নিজের পরিচয় ব্যক্ত করলো নিলুর কাছে।

পরিচয় তো আমি দেব ;

তার আগে কয়েকটা কথা বলছি সেটা শুনে তুই যদি বুঝতে পারিস আমি কে।

মহিলাটি পরিচয় দেওয়ার ঢঙে নিজের বর্ননা করতে লাগল।

মনে আছে তোর আমরা দুজন সেই ২০০৭ সাল থেকে এক সঙ্গে পড়তাম। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর দুজনের বিষয় প্রায় একই ছিল , শুধু দুটি বিষয় আলাদা । ২০১৪ সালের প্রথমের দিকে আমি তোকে কিছু বলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম কিন্তু ভয়ে আমি বলতে পারিনি।

এই কথা শুনে নিলু নিস্তব্ধ হয়ে ফোনটি কানে ধরে রেখে শুধু দাঁড়িয়ে থাকল কোনো কথা বলল না। কেন এরকম হল তার ; সে কি আগে থেকেই জানত , 

নাকি আরো কিছু। 

নিলু ফোনটি কেটে দিল। 

দুই হাত মুখে চেপে ধরে নিজের পাতা বিছানায় মুখ নিচু করে শুয়ে পড়ল। নিলু ভাবতে লাগল একি করে হতে পারে যাকে আমি একদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম , সে আনার আমার কাছে , আমাকে ফোন করছে । নিলু নিজেকে অনেকটা নীচে নামিয়ে নিল।

একি হতে পারে , 

কি ঘটেছিল সেদিন কেনই বা নিলু তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

সবে মাধ্যমিক শেষ করে নতুন ক্লাসে ভর্তির আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে কারণ যেই স্কুলে মাধ্যামিক পর্যন্ত পড়েছে সেই স্কুলে আবার পড়ার জন্য। আবার পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হই হুল্লোড় আরও অনেক কিছুই। সেই সঙ্গে কৈশোর অতিক্রম করে বয়ঃসন্ধিতে পা , মনকে একজায়গায় রাখার চেষ্টা করলে ও কিছুতেই আর সংযত হয় না। নতুন ক্লাস , নিজেদের মনে কোন এক চাপ থাকলেও পুরোনো বন্ধুবান্ধব পেয়ে সবাই খুশি। ক্লাসে নতুন কিছু মুখও দেখা গেল , যারা অন্য স্কুল থেকে এসেছে। পুরোনো নতুন দের নিয়ে এভাবেই কাটছিল দিনগুলি। আবার মাঝে মধ্যে মনে হতো আর মাত্র দুই বছর , কয়েকটা দিন কেটে গেলে সবাই আলাদা , এই বিষয়টা নিয়ে নিজেরা প্রকাশ না করলেও একটা চাপানোত্তর সৃষ্টি হয়েছিল।

এই ভাবে ৫-৬ মাস কেটে যাওয়ার পর নিলুর সামনে আকস্মিক ভাবে শ্রুতি নামের এক মেয়ে। নিলু অবশ্য তাকে চিনতো। নিলু ভেবেছিল প্রতিদিনের মতো কোনো সাহায্যের জন্য এসেছে । কিন্তু সেদিনের তার চাউনি ছিল অন্যরকম । 

নিলু তো 

অনায়াসে বলে ফেলল –

কী বল ?

শ্রুতি বলে উঠল

আজ আমি কিছু সাহায্য চাইতে আসিনি। 

তোকে কিছু বলতে এসেছি’।
তো বলনা কী অসুবিধা হয়েছে , 

আমি তো রয়েছি সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি।
‘আমি তোকে ভালোবাসি’।
এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিলুর সারা শরীর শীতল হয়ে এলো। যেন নিথর দন্ডায়মান বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকল। নিলু ভেবেছিল পাঁচ বছর একই ক্লাসে পড়াশুনা করেছি আমার তো কোনো মনে হয়নি , আর মনে হবার মতো কিছুই নেই , নিজেরা নিজেদের মতো একসঙ্গে মেলামেশা করেছে। 

নিলু এক মনে কি যেন ভাবছিল। 

তখন শ্রুতি বলে উঠল
কি এত ভাবছিস ; কিছু তো বল।
নিলু যখনই কিছু বলতে যাবে শ্রুতি আবার বলতে আরম্ভ করল 


‘তুই আজ আর আমায় ফেরাতে পারবি না । তোকে এই কথাটা বলবো বলে কতদিন অপেক্ষা করছি , কিন্তু নিজের মধ্যে সাহস পাইনি। যখন আমরা ক্লাস ফাইভ এ পড়তাম তখন একে অপরকে ভালোভাবে জানি না । যেদিন তোকে প্রথম দেখলাম সেদিন ছিল এক বৃষ্টির দিন। ছাত্র ছাত্রী বেশী না আসার জন্য একসঙ্গে ক্লাস হয়েছিল , আর তুই ক্লাসের মনিটর ছিলি। আর আমি তোকে স্যারের কাছে মার খাইয়েছিলাম। তুই প্রচুর কেঁদেছিলি। প্রথমে রাগের মাথায় আমি আনন্দ পেলেও পরে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। 

আর তখন কী ভালবাসা , 

কী প্রেম কিছুই জানতাম না? 

শুধু তোকে দেখলে আমার ভালো লাগত।এরপর আর অনেক ঘটনা রয়েছে।

তুই আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিসনা।'


এই সব কথা শোনার পর নিলু বলে উঠল 
‘দেখ তোর ধারণাটাই ভুল , আমরা সহপাঠী ভালো বন্ধু ও বলতে পারিস , আর এই সব ভালোবাসা আমি মানি না। আমার পক্ষে এইসব ভালোবাসা প্রেম করা সম্ভব নয় , আর আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি সামনে পরীক্ষা আছে তাতে মন দে। তোকে তো ভালো রেজাল্ট করতে হবে’
আরও বলল

‘জানি আমার উপর তোর রাগ হচ্ছে , রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। জানি আমাকে ভুলতে তোর কষ্ট হবে , যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে ভুলে যা , যত তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবি তত তাড়াতাড়ি তোর নিজের সাফল্যের দিকে এগোতে পারবি।'

এই বলে নিলু ফিরে এলো। শ্রুতি যথাস্থানে দাঁড়িয়ে থাকল।
কয়েক দিন পর পরীক্ষা , পরীক্ষায় মন দিতে চাইলেও কিছুতেই মন বসতে চাইছিল না । কোনো রকমে পরীক্ষা শেষ হলো , যে যার নিজের রাস্তায় পাড়ি দিয়েছে , তবুও শ্রুতি আশায় বুক বেঁধেছিল। রেজাল্টের দিন আবার দেখা হবে। হয়তো বা নিলু সেদিনই তার প্রত্যাশা পূরণ করবে। সেদিন নিলু রেজাল্ট নিতে এলো না। শ্রুতি রেজাল্ট হাতে দাঁড়িয়েছিল শুধু একবার নীলুকে জানাবে তার রেজাল্ট ভালো হয়েছে । কিন্তু আর বলা হলো না। সেদিনের পর থেকে নিলুর সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা হয়নি।

আবার ফোন বাজল , শ্রুতি আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বলেই ফেলল আমি শ্রুতি।

‘তুই কেমন আছিস , 

অনেক দিন পর নাম্বার জোগাড় করে তোকে ফোন করলাম । এর পরেও তুই আমার সঙ্গে কথা বলবি না।'

পুরোনো বান্ধবীর সঙ্গে কথা হচ্ছে , নিলু বাইরে আনন্দিত হলেও অন্তর যেন ফেটে যাচ্ছে । যাকে একদিন ফিরিয়ে দিয়েছিল সে আবার ফিরে এসেছে । আবার সেই পুরোনো বন্ধুর মতো কথা হয় । কিন্তু শ্রুতি যেন নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও সে যে আগের নীলুকে পেয়েছে। সময় পেলেই নীলুকে ফোন আর নীলু বসে থাকত কখন সেই পতিক্ষিত গলা শুনতে পাবে।নিলু তার আগের ভুল বুঝতে পেরে ঠিক করেছিল ভুল শুধরে নেওয়ার সময় এসেছে । এবার সে মনস্থির করল সামনে সরস্বতী পূজার দিনই তাকে সেই কথাটা বলবে সে যে কথাটা শুনতে চেয়েছিল , তাকে নীলু ফিরিয়ে দিয়েছিল। দুজনের কথাবার্তায় ঠিক হলো তারা সরস্বতী পূজোর দিন একে অপরকে এক ভালো উপহার দেবে। নীলু ভাবল শ্রুতি হয়তো আমাকে আবার সেই কথাটা বলবে। আবার উল্টো টাও হতে পারে আমি যদি সেই কথা বলি এই যদি আমাকে ফিরিয়ে দেয় । সে যাই হোক আমি বলবোই।

পঞ্চমীর সকালে তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে অঞ্জলীর জন্য রওনা হয় স্কুলের দিকে। সবুজ পাজামা সবুজ পাঞ্জাবিতে নীলুকে খুব সুন্দর লাগছিল। দুজনে একসঙ্গে অঞ্জলী দেবে বলে নীলু অপেক্ষা করতে লাগল। কখন শ্রুতি আসবে আর কখন অঞ্জলী দেবে। স্কুলে অনেক ভিড় ,আর এই ভিড়ে খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। যতটা সম্ভব খোঁজা যায় ততটাই চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু পাওয়া গেল না। 

নিরাশাগ্রস্ত হয়ে একজায়গায় চুপটি করে বসে ভাবতে লাগল। কেমন দেখতে হবে শ্রুতিকে , ওকি সেই আগের মতোই হবে নাকি শরীরের পরিবর্তন ঘটেছে। সে আগে যখন অঞ্জলী দিতে আসত কি অপরূপ সুন্দর লাগত তাকে। 

যখন শাড়ী পড়তো, চোখে কাজল লাগত, রজনীগন্ধার মালা দিয়ে খোঁপা বাঁধতো, তখন ওকে ফাল্গুনের শুক্লপঞ্চমীতে এক স্বরস্বতীর মতো লাগত ওকে। তাহলে কেন তাকে আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে ক্রমে অঞ্জলী শেষ হতে চলল। এদিকে পুরোহিত মশাই ডাকছে যারা বাকি রয়েছে তাদের অঞ্জলী দেওয়ার জন্য। শ্রুতি আসবেনা ভেবে নীলু বিষণ্ন বদনে মণ্ডপের দিকে এগোতে লাগল। হঠাৎ তার চোখে পড়লো ফুলের সাজি হাতে স্কুলের সেই চিরায়ত নীল পাড়ের সাদা শাড়ী পরে এক মহিলা স্কুলের গেট দিয়ে মণ্ডপের দিকে এগিয়ে আসছে। প্রথম দেখাতে চিনতে না পারলেও মণ্ডপের দিকে এগিয়ে আসতে তাকে চিনতে পারলো।
‘এই তো শ্রুতি’।
এই আনন্দমুখর অনুষ্ঠানে কেন এমন শাড়ী পরে এসেছে। কোথায় গেল সেই ফুল দিয়ে খোঁপা বাঁধা, কোথায় গেল সেই চোখের কাজল কোনো কিছুই নেই শ্রুতির বদনে। এখন এসব কথা ভাবার সময় নয়, অনেকদিন পর দেখা হয়েছে আগে অঞ্জলী শেষ করি তারপর বাকি কথা। শ্রুতি কাছে আসতেই নীলু বলে উঠল
‘চল শ্রুতি আগে অঞ্জলী দিয়ে দিই’।
‘হ্যাঁ,চল অনেক দেরি হয়ে গেল’।

দুজন একসঙ্গে অঞ্জলী দিল,দেওয়ার পর প্রসাদ খাওয়া শেষ করে একটা নিরিবিলি জায়গায় বসে দুজনে মিলে গল্প করতে লাগল। নীলু যেই বলতে যাবে সেই কথাটি অমনি সেই সময় মা-মা চিৎকার করতে করতে এক বাচ্চা মেয়ে তাদের দিকে দৌড়ে আসছে। নীলু এদিক ওদিক তাকাল কাউকে দেখতে পেল না। সেইখানে কেবল তারা ছাড়া আর কেউ ছিলনা। বাচ্চা মেয়েটিকে দেখে মনে হয় তিন বছরের বেশি হবে না। সেই মেয়েটি দৌড়ে এসে শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরল, শ্রুতি তাকে কোলে তুলে নিল। ততক্ষনে নীলু ভারাক্রান্ত মনে পরাজিত সৈনিকের মতো ফিরে আসছে। শ্রুতি যখন চোখ তুলে দেখে নীলু অনেকটা দূরে চলে গেছে। শ্রুতি ডাকল নীলুকে
‘নীলু শোন, দাঁড়া তুই, আমার উপহার টুকু নিয়ে যা’।
নীলু পিছন না ফিরে উত্তর দিল 
‘না থাক, আমি উপহার পেয়ে গেছি’।

———-/—-সমাপ্ত———-/——

Friday, November 6, 2020

কম যান

 কম যান


নেশার ঘরে, জুয়া খেলায়

যত পারো কম যান

রঙ তামশার রঙ্গধরণী সল্পক্ষণ

কবে জানি যাই জান


পাপনদে থাকলে ডুবে

দিলটাকে সমজান

যত পারে করে যাক

পূণ্যের সন্ধান


সময় থাকতে ভাল হোন

নেওয়ার আগে যম জান

মৃত্যুর পূর্বে পাও যেন তুমি 

জান্নাতের সুঘ্রাণ

মানতে হয় আলেম

 মানতে হয় আলেম

            এম এ মাসুদ রানা 


আলেমের কাছে কলমা শিখে

হলে তোরা মুসলমান

তোরাই করছিস আজ দেখি

আলেম চরম অপমান


আলেম পড়াবে তোর জানাজা

যখন হবি লাশ

আলেম হলেন এই ত্রিভুবনে 

মহান খোদার দাস


আলেমের কাছে কোরআন শিখে

বদদ্বীন খোঁজে দ্বীন

কেমন করে শোধ করিবে তুই 

আলেমগণের এই ঋণ


দ্বীনের পথে অবিরাম চলছে ছুটে 

পিছু হটে না তবু

কাফের বেদুইন কখনো তাদের 

করতে পারে না কাবু।


একদিন তোরা বুঝবে সবি

করতে পারবে না কিছু 

লজ্জা ঘৃণায় চলবে চলবে তোরা

মাথা করবে নিচু


আবার বলি তোমরা শোনো 

আলেমদের সম্মান কর

উপযুক্ত সম্মান দিয়ে তোরা 

তাদের সজহ পথ ধর।

গাজওয়ায়ে হিন্দ

গাজওয়ায়ে হিন্দ 

এম এ  মাসুদ রানা 


হাতের মুষ্টিতে শক্ত করে শান দাও

প্রতিবাদের তরে মনকে শক্ত করে নাও।

অচিরেই শুরু করতে  হবে মহসযুদ্ধ

মুসলিম সমাজ আজ বেজায়  ক্ষুব্ধ। 


প্রতিহতর তরে বেঁধে নাও মহাজোট 

কোন মালাউন বসাতে না পারে যেন ঠোঁট। 

ইমানের জোরে আত্মাকে করে নাও শুদ্ধ

মক্তভাবে বাঁচাতে মনুষ্যত্বকে করে নাও বিশুদ্ধ। 


গাজওয়ায়ে হিন্দের তরে আজো

মজলুম কান্না হৃদয়ে করুন সুরে বাজে। 

কাশ্মীর বসনিয়া সিরিয়া,লিবিয়া ফিলিস্তিন 

হরদমে খুজে ফিরে মুজাহিদ প্রতিদিন। 


খালিদের তারিকের, শিষ্য তুমি বিন কাসিমের

মুক্ত করিতে আকসা, তুমিও তৈরি হ‌ও অসীমের।

কি দূর্বল আহ কি মুমূর্ষু যন্ত্রণায় হয়েছে তারা কাতর

ফিরে কি পাবে না তাঁরা কখনো স্বাধীনতা আবার।


ফিরাতে হবে তাদের স্বাধীন জীবিকার তরে 

অন্যায় জুলুমে যেন আর নাহি কেহ মরে।

প্রতিহত করতে হবে তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে

শান্তি পাবে তারা আমাদের ঐক্যের জোরে।

এসো মুমিন মুজাহিদ

 এসো মুমিন মুজাহিদ

এম এ  মাসুদ রানা 


এসো মুমিন মুজাহিদ তোরা

রাখো ভাই হাতে হাত,

ছেড়ে যেওনা অবেলায় 

বিনিময় করি দ্বীনের সৌওগাত।


কতই সুন্দর মধুর বানী পাঠিয়েছে

কালেমায় শাহাদাত,

এ বাণীটি পৌঁছাতে হবে

করতে হবে আঘাতে প্রতিঘাত।


যদি তোরা সমান্যতে ভয় পাও

প্রতিবাদেবকার হবে হিম্মত,

তাই এসো ভাই মুমিন মুজাহিদ

মোরা রুখে সব জুলমাত।

মুসলিম শাসক

 মুসলিম শাসক

এম এ মাসুদ রানা 


হৃদয়ে থেকে রক্ত ঝরে

আঁখি থেকে পরে জল।

উষ্ণ জলে ভাসছে হৃদয়

জনপ্রিয়তা নিয়ে ভয়।


কোন সুখেতে হাসছো তুমি

মনপুড়ে আজ হচ্ছে খাক্

বলো যা হবার তা হয়ে যাক

আরো বলো সততা দূরে রাখ।


দেখতে তোমায় মানুষরুপী

মনুষ্যত্ব নাই তোমার মনে

ঘুরে আবার তুমি জনে জনে

গুজব ছড়াও ক্ষণে ক্ষণে। 


কুকুর বিড়াল অনেক দামি

মুসলিম হয়ে করো বোকামী

প্রযোজনে করো হানাহানি 

প্রমাণ করতে চাও তুমি দামী।


মুসলমানের মৃত্যুতে আজ

উৎসাহ দেওয়া তোমার কাজ।

বিশ্ব জুড়ে নিঃস্বর খেলায়

মা-বোনদের কান্নার মেলায়।


তোরা হলো মসলিম শাসক

কাজকর্ম করো কেমন আজব

মসলিম হয়ে মুমিন মারো 

বেধর্মীদের হাতটি ধরো।

ইচ্ছে আছে

  ইচ্ছে আছে

 এম এ মাসুদ রানা 


আরব মরুর হেরার বুকে

নবীর ধ্যানের গর্ত আছে!

সেথায় যাবো আমার আশা

আমায় ধরেছে চরম নেশায়। 

ঘুরতে যাবার ইচ্ছে আছে

মনের ভিতর বাজনা বাজে। 


আমার চোখে স্বপ্ন জমা

সুরমা ওয়ালা সুরমাও আছে!

ফরিয়াদ জানাই এই অসহায়

প্রিয় নবীর মাজারে যায়। 

মন ভরিয়ে করবো সালাম 

মনে মনে সফত নিলাম। 


আজ শুধু আমার একটি চাওয়া

আমার নবীর পরম কাছে!

স্বপ্নে হলেও একবার তোমায় দেখার

আমার বড় ইচ্ছা আছে!

নেই

 নেই 

এম এ  মাসুদ রানা 


ঈমান আছে, আমল আছে

নেই তবে এখলাছ

মরন হবে, স্মরণ আছে

নেই শুধু এহসাস


কোরআন আছে, হাদিস আছে 

নেই তার আলোচনা 

দ্বীন আছে, ইসলাম আছে 

নেই শুধু প্রকাশ 


কলম আছে, কালি আছে

নেই শুধু  জ্ঞান 

প্রাণ আছে, জ্ঞান আছে

নেই কোন অনুশোচনা


চোখ আছে, মুখ আছে

নেই শুধু স্বাধীনতা

দল আছে, বল আছে

নেই শুধু একতা


টাকা আছে, পয়সা আছে 

নেই শুধু উদারতার 

ছেলে আছে, মেয়ে আছে 

নেই শুধু সুশিক্ষা।

বিদায়(সাঃ)

  বিদায় (সাঃ)

এম এ  মাসুদ রানা 


কান্নার তরে গগন কাঁপে

চন্দ্রও লুটাই পরে ধরায়।

সোমবারেতেই জন্ম তোমার 

সোমবারেতেই মৃত্যু তোমার।

ছাড়লো তিনি ধরনী তল

কিছুটা হারালাম মনের বল।


থেকে গেল আসা মধুর বানীর

বার্তা নিয়ে জিব্রাইল আসবে না জানি।

সেই শোকে কাঁদলো আরো বিশ্ববাসী

ভুলতে পারে না নবীর ভালো বাসাবাসি।

নেমে আসলো আত্মা ঘাতক আজ্রাইল, 

সাথে নিয়ে নবীর আত্মা হননের ফাইল। 


সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নবী দু"জাহান 

তাঁর বিদায়ে কলিজা হলো খানখান।

তিনি ছিলেন নূর নিনাদ, করেনি কোন বিবাদ!

বিদায় নিলো দ্বীনের রবী, শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ!

কম মানি

 কম মানি 

এম এ মাসুদ রানা 


আমরা এখন খোদার হুকুম

আগের চেয়ে অনেক কম মানি।

তাই ধরাতে মুসলিম সমাজ 

হচ্ছি সদা লাঞ্চিত আজ।

জুলুম করে দাঁত কেলিয়ে 

পৃথিবীর পরিবেশে থেকে বেড়িয়ে।

বলি সবাই, কি হয়ে যাবে এমন হলে

পর্দা ছেড়ে পরী-বেশে নারী চলে। 

পর্দা করি জীবন গড়ি

আসবে নাকো আর নির্যাতন।

কুকুরদলের ধ্বংসী হানা

নির্যাতিত হবে না, এটাও জানা।

খোদার হুকুম মানলে সবে

আপদ থেকে নিরাপদে সবাই রবে।

শ্রেষ্ঠ আদর্শ

 শ্রেষ্ঠ আদর্শ 

এম এ  মাসুদ রানা 


মোর নবীজি চাইতো যদি

হতো সোনার পাহাড়,

সেই নবীজি অনেক সময়

করেনি কোন অনাহার।


নিজের ভোগে চায় নি কিছু

চাইতো সবার তরে,

সেই নবীজির আদর্শ ভাই

রাখনা বুকে ধরে।


যাঁর জীবনটা কাটলো কেঁদে-

উম্মতী উম্মতী করতে

তাঁহার আদর্শ করলে ধারন

শয়তান নাহি পারবে ধরতে।


মোদের নবী শ্রেষ্ঠ নবী, শ্রেষ্ঠ নবী

শ্রেষ্ঠ ছিলো দু'জাহান,

নবীর সুপারিশ ছাড়া শেষ দিবসে 

পাবে না কেউ পরিত্রাণ।

সালাত

 সালাত

এম এ মাসুদ রানা 


সালাত পড়ি, জীবন গড়ী

সালাত আদায় করি,

সালাত পড়ে সঠিক পথে

নেকীর পাহাড় গড়ী।


সালাত মোদের হৃদয় নীড়ে

এনে দিবে জান্নাতী ঘ্রান,

জাহান্নামের আগুন থেকে

মোরা পাবো পরিত্রান।


সালাতে মাঝে হয় কথা 

খোদা তাআলার সাথে,

চাওয়া পাওয়ার যত কথা 

বলবো খোদার কাছে।


সালাত আদায় করলে হবো 

খোদর অতি আপন,

পরকালে পেয়ে যাবো মোরা

অতি সুখের ভুবন।

Tuesday, November 3, 2020

তুমি কি আমার হবে?

 তুমি কি আমার হবে?

     এম এ মাসুদ রানা 


তুমি কি বৃষ্টি হবে?

ভিজিয়ে দিবে আমায় সকাল দুপুরে।

তুমি কি সূর্য্য হবে?

আমায় আলো দিবে চুপটি করে।


তুমি কি আকাশ হবে?

ঢেকে রাখবে সযত্নে আমায় শুধু।

তুমি কি বাতাস হবে?

তোমার কমল ছোঁয়ায় দিবে যাদু।


তুমি কি রাত হবে?

আদর করে, আমায় রাখবে বুকে।

তুমি কি চাঁদ হবে?

আমাবস্যায় জ্বলবে ধুঁকে ধুঁকে।  


তুমি কি আমার সাথী হবে?

সবসময় আমায় নিয়ে কথা কবে।

তুমি কি আমার হবে?

চিরকাল আমার কাছে রবে।

Friday, October 30, 2020

প্রানান্তর প্রচেষ্টা

 প্রানান্তর প্রচেষ্টা 

   এম এ মাসুদ রানা 


জেগে উঠো মুমিন মুসলিম

জিহাদের দাও ডাক।

নবীকে (সাঃ) নিয়ে ব্যাঙ্গকারীর 

মাথায়  মারো লাথ।


বেশি বাড়াবাড়ি করছে তারা

কলিজায় করছে আঘাত।

শক্ত জবাব দিয়ে হবে ওদের 

ভাঙতে হবে কালোহাত।


ওরা মাঝে মাঝে বদনাম রটায়

পরিনামে পায় জবাব।


বিবেক মোদের ডাক দিয়েছে

করতে হবে প্রতিবাদ,

হাসিমুখে নবীর তরে শহীদ হবো 

করবো মোরা জিহাদ।

Wednesday, October 28, 2020

হৃদয় রানী

  হৃদয় রানী 

 এম এ  মাসুদ রানা 


বুকভরা স্বপ্ন, মনে আছে ভালোবাসা

সাথে আছে সেই নিষ্পাপ হৃদয়ের আশা।

স্বপ্নরা মেলছে ডানা, হৃদয়ে দিয়েছে হানা

সেই তরে ধরেছে নতুন নতুন বাহানা!


আচ্ছা!

একবার কি ফিরে দেখা যায় না?

একবার কি কাছে আসা যায় না? 


তাছাড়া; 

নতুন করেও কিছু বলা হয় না!

নতুন করে কি আকাশে ঘুড়ি হওয়া যায় না?

এই হৃদয় একবার কমল পরশ দিতে পারবে না?

ভালবেসে কি হাত দুটি একবার বাড়াতে পারো না?


হ্যাঁ, 

আমি বসে আছি,

তোমার পথেই চোখ মেলে চেয়ে আছি,

আমি জানি তুমি ফিরবেই, 

আমার প্রিয়োসী হয়ে। 


তুমি আবার আসবেই,

হ্যাঁ আমি জানি সত্যি আমি জানি,

কারণ তুমি যে, আমার হৃদয় রানী।

Tuesday, October 27, 2020

ফরিয়াদ

   ফরিয়াদ  

এম এ মাসুদ রানা 


যে দেশে চলে না পর্দার বিধান 

গাজা সেবানে নাবালক ছেলে,

পীর সাহেবরা করে শরাব পান

বার আসলে এমপি-মন্ত্রী মিলে।


ডিসকোর ভিতর রয় মাতোয়ারা 

ধর্ষক দিয়ে করে জয় লাভ,

সুদ ঘুষের কারবার চলে যথাতথা 

সিদ্ধ ছাড়া আসেনা ভাব।


শিরক করে পীরের সাহেবরা

বিদ'য়াত হলো চির সঙ্গী, 

কুফরি করে মহা আনন্দে

ইমানের সাথে চালাই ভঙ্গি। 


কুরআনের পাখি যায় নির্বাসনে  

তাফসির প্রচার বন্ধ হয়,

শত্রুর সাথে দফায় দফায় সন্ধি

হক কথাতে নীরব রয়।


জুব্বা টুপি রাখলে গাঁয়ে

দেখলে দাড়ি পুলিশ ধরে,

কেউ হয় না দেখেও অবাক 

মেধাবীর সব কারাগারে মরে।


এমন দেশে আসবে না কেন ঘূর্ণিঝড়? 

কারণ মোরা জানতে চাই,

আল্লাহর কাছে করে আবদার 

লজ্জা সমর বলতে কিছুই নাই?


মহান মালিকের পবিত্র বানী 

পড়লে বলো জঙ্গিবাদী,

রাষ্ট্র বিধান হলো না কুরআন 

উল্টো দিলো চরম অপবাদ। 


এমন এক জালিম রাজ্যে

আসবে গজব স্বাভাবিক এটা, 

অনুপাত হয় না নিজ কার্যকর্মে

ভালো কথা বললে বলে বেটা।


আল্লাহ তুমি সর্বশক্তিমান  

ক্ষমার তরে দুই হাত তুলি,

পবিত্র মহান সত্তা তুমি

কষ্টের মাঝে তোমায় নাহি ভুলি


তোমার দয়াতে রয়েছি বেঁচে 

মৃত্যু দিলে কিছু করার নাই,

আমার সোনার বাংলাদেশে

ইসলামী রাজ্য কায়েম চাই।


ততটুকু সুযোগ দাও খোদা তুমি

আমরা শহীদি মরন চাই,

আমি কি লিখতে কি লিখেছি

ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টি দেখ ভাই।


রচনাকালঃ- ১৯/১১/২০১৯